সুদানের যুদ্ধ: রাজধানী ফিরে পেল সেনা, এরপর কী?

সুদানের গৃহযুদ্ধ: রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনীর জয়, শান্তি কত দূরে?

প্রায় দুই বছর হতে চলল, সুদানে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সেনাবাহিনী (SAF) এবং আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সম্প্রতি রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনী কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানও। তবে, এই সাফল্যের পরেও যুদ্ধ সহজে থামার কোনো লক্ষণ নেই, বরং তা আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে।

সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ঘোষণা করেছেন যে খার্তুম এখন “মুক্ত”। সেনাবাহিনীর সেনারা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর, প্রেসিডেন্টের বাসভবন পুনরুদ্ধার করা ছিল তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।

যুদ্ধ শুরুর দিকে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস খার্তুমের কিছু অংশ দখল করে নেয়। এরপর থেকেই শহরটি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এখন সেনাবাহিনীর আশা, রাজধানী পুনরুদ্ধার তাদের জন্য অন্য এলাকাগুলোতেও সাফল্যের পথ খুলে দেবে। রাজধানী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় আন্তর্জাতিক মহলে সুদানের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে বলে তারা মনে করছে।

অন্যদিকে, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থন ধরে রেখেছে। তাদের লক্ষ্য, ক্ষমতা ধরে রাখা এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

শান্তির আলোচনা এখনো অনেক দূরে, কারণ কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। খার্তুম বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে রসদ সরবরাহ এবং প্রচারের কাজে সহায়তা করছিল।

এখন সেনাবাহিনী সেই সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করতে চাইছে।

যুদ্ধ মূলত র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মতবিরোধ থেকে শুরু হয়েছিল।

বর্তমানে দুই পক্ষই বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। খার্তুমের বাইরে দারফুর, কোর্দোফান এবং গেজিরা প্রদেশেও যুদ্ধ চলছে।

উভয় পক্ষই শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বাড়ছে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জানিয়েছেন, সম্প্রতি উত্তর দারফুরের তোরা শহরের একটি ব্যস্ত বাজারে হামলায় শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

এই ঘটনায় তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সুদানে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

১ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রতিবেশী দেশ যেমন – চাদ, দক্ষিণ সুদান এবং ইথিওপিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং তাদের মধ্যে ৬ লক্ষ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

উভয় পক্ষই একে অপরের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ত্রাণ পাঠাতে বাধা দিচ্ছে এবং র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া, যুদ্ধের কারণে কৃষি উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুদানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, হাসপাতালগুলো হয় ধ্বংস হয়েছে, না হয় দখল করা হয়েছে।

শিশুদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই গৃহযুদ্ধ সুদানের বিভাজন ডেকে আনতে পারে। এরই মধ্যে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এবং তাদের মিত্ররা একটি “ভিত্তি স্থাপন সনদ” স্বাক্ষর করেছে, যা একটি আলাদা সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেয়।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক মহলের চেষ্টা সত্ত্বেও, শান্তি আলোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষই আপস করতে রাজি নয়, যার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে এই যুদ্ধ চলতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *