সুদানের গৃহযুদ্ধ: দুই বছরে ধ্বংস, উদ্বাস্তু এবং দুর্ভিক্ষের বিভীষিকা।
গত দুই বছর ধরে সুদানে চলা গৃহযুদ্ধ দেশটির ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। ১৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে, সুদানের সামরিক বাহিনী – জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এর নেতৃত্বে – এবং আধাসামরিক বাহিনী, র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) – জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেটি নামেই পরিচিত, এর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়, যা দ্রুতই সহিংস রূপ নেয়।
আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (International Rescue Committee) এই সংকটকে ‘ইতিহাসের বৃহত্তম মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সংঘাতের শুরুতেই খার্তুমে (Khartoum/খার্তুম) তীব্র লড়াই হয়, যেখানে সরকারি বাহিনী এবং আরএসএফ একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুদ্ধের প্রথম দিকেই আরএসএফ রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ এবং বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
যুদ্ধ যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন প্রতিবেশী দেশগুলিতে শরণার্থীদের ঢল নামে। বিশেষ করে চাদে (Chad/চাদ) ২০ হাজারের বেশি মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিতে বাধ্য হয়।
ঈদ-উল-ফিতরের আগে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। খার্তুমের হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট দেখা দেয়, মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক এবং অন্যান্য নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করে।
যুদ্ধ শুধু খার্তুমেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তা উত্তর কোর্দোফান এবং দারফুর (Darfur/দারফুর) অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে।
গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে, যেখানে আরএসএফ-এর বিরুদ্ধে মাসালিতসহ (Masalit/মাসালিত) অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উপর নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দারফুরের একটি গণকবরে অন্তত ৮৭ জনের লাশ পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মাসালিত সম্প্রদায়ের মানুষ।
যুদ্ধ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ২ কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে।
অনেক উদ্বাস্তু শিবিরে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আরএসএফ-এর আক্রমণে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ডিসেম্বর ২০২৩-এ আরএসএফ সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওয়াদ মাদানির নিয়ন্ত্রণ নেয়। শহরটি দখলের পর সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে।
এরপর ফেব্রুয়ারী ২০২৪ এ সুদানি সামরিক বাহিনী খার্তুমের যমজ শহর ওমদুরমানে (Omdurman/ওমদুরমান) অভিযান শুরু করে।
সংঘাতের কারণে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও হুমকির মুখে পড়েছে। খার্তুমের জাতীয় জাদুঘর থেকে মূল্যবান শিল্পকর্ম লুট হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে শান্তি ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উদ্বাস্তুদের সাহায্য করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি, সংঘাতের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের চেষ্টা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান