দার্ফুরে ভূমিধসে গ্রাম নিশ্চিহ্ন, নিহত ১০০০ জনের বেশি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সুদানের দারফুর অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধসে একটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এতে ১০০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।
রবিবার, মাররা পর্বতমালায় অবস্থিত তারাসিন গ্রামে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। সুদানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গ্রামের সকল বাসিন্দা নিহত হয়েছে, যা এক হাজারের বেশি হতে পারে।
শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি জীবিত রয়েছেন।” বিবৃতিটিতে আরও বলা হয়, গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে মৃতদেহগুলো উদ্ধারের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
এদিকে, সুদানের ক্ষমতাসীন সার্বভৌম পরিষদ মাররা পর্বতমালায় ভূমিধসে “শত শত নিরীহ বাসিন্দার মৃত্যুতে” শোক প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, দুর্গত এলাকার মানুষদের সহায়তার জন্য “সর্বাত্মক প্রচেষ্টা” চালানো হচ্ছে।
মাররা মাউন্টেন নিউজ আউটলেটের শেয়ার করা একটি ফুটেজে দেখা গেছে, পাহাড়ের মাঝে একটি সমতল এলাকায় কিছু লোক মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
এই ভয়াবহ ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন সুদানে সামরিক বাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-এর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ চলছে। রাজধানী খার্তুমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে, যা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের সদস্য এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে দারফুরের অধিকাংশ অঞ্চলে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর মতো সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, মাররা পর্বতমালাসহ দারফুরের অনেকগুলো জনপদ গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের কারণে বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সংস্থাটি এই অঞ্চলগুলোকে সুদানের মানবিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে “একটি কালো গহ্বর” হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের জুলাই মাসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের মানুষজন “গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, মাররা পর্বতমালা এলাকায় সক্রিয় সুদানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সেনাবাহিনী, যারা দারফুর ও কর্ডোফান অঞ্চলে সক্রিয় একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। এই গোষ্ঠীটি চলমান গৃহযুদ্ধে কোনো পক্ষ নেয়নি।
মাররা পর্বতমালা একটি রুক্ষ আগ্নেয়গিরি অঞ্চল, যা এল-ফাশেরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই এলাকাটি সামরিক বাহিনী ও র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের মধ্যে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও, এল-ফাশের এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি আশ্রয়স্থল।
সুদানের এই গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবারকে ঘাস খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখানে জাতিগত নিধন ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত করছে।
তারাসিন গ্রামটি মাররা পর্বতমালায় অবস্থিত। এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা ৩,০০০ মিটারের বেশি।
এই পর্বতমালা তার শীতল তাপমাত্রা এবং তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য পরিচিত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এটি রাজধানী খার্তুম থেকে ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি পশ্চিমে অবস্থিত।
রবিবারের এই ভূমিধস সুদানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে বহু মানুষ মারা যায়।
গত বছর, লোহিত সাগর প্রদেশে ভারী বৃষ্টিতে একটি বাঁধ ভেঙে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।