সুদানের জাতীয় জাদুঘরে ভয়াবহ লুটপাট, ধ্বংস হয়েছে বহু মূল্যবান পুরাকীর্তি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সুদানের রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে ভয়াবহ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-এর (আরএসএফ) মধ্যে চলমান যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা জাদুঘরের অমূল্য সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জাদুঘরের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। জুন ২০২৩ সাল থেকে এই উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছিল। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, মূল্যবান সামগ্রী বোঝাই করে ট্রাকগুলো জাদুঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি, আরএসএফ-কে খার্তুম থেকে বিতাড়িত করার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট হয়।
জাদুঘরের ভেতরের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, কক্ষগুলো ফাঁকা, ধ্বংসস্তূপের স্তূপ এবং ভাঙা-চোরা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। বিশাল আকারের কিছু মূর্তি, যেমন—ফারো রাজা তাহরকার সাত টন ওজনের একটি মূর্তি, যা এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তবে, অনেক মূল্যবান সামগ্রীই লুট হয়ে গেছে।
সুদানের জাতীয় জাদুঘরে নুবীয় রাজ্য, কুশীয় সাম্রাজ্য, খ্রিস্টান ও ইসলামিক যুগসহ দেশটির হাজার বছরের পুরোনো প্রায় এক লক্ষ প্রত্নবস্তু সংরক্ষিত ছিল। এখানে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালের পুরোনো মমি ছিল, যা প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, আমানিশাখেতোর (কুশ রাজ্যের রাণী) সময়ের সোনার অলঙ্কারসহ আরও অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
খার্তুমের এথনোগ্রাফিক জাদুঘরের একজন তত্ত্বাবধায়ক এলনজির তিরব আবাকের হারুন জানান, আরএসএফ বিতাড়িত হওয়ার পর একটি বিশেষজ্ঞ দল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করতে সেখানে গিয়েছিল। তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জাদুঘরের বিরল প্রত্নবস্তু, মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার ও পাথরসহ অনেক কিছুই খোয়া গেছে।
লুটতরাজ শুধু প্রদর্শনী কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সুরক্ষিত কক্ষে রাখা মূল্যবান সামগ্রীও রেহাই পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, লুট হওয়া অনেক কিছুই দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ইতোমধ্যে শিল্প ব্যবসায়ীদের সুদানে পাচার হওয়া কোনো শিল্পকর্ম কেনাবেচা, আমদানি বা রপ্তানি না করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনায় সুদানের জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী হালা আল-কারিব বলেন, “আরএসএফ কর্তৃক সুদানের জাতীয় জাদুঘর লুট ও ধ্বংস হতে দেখা ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনার একটি। আমি লজ্জিত এবং ক্ষুব্ধ।”
ঐতিহাসিক এই ক্ষতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সুদানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকে অনেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
সুদানের এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের দেশেও ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাওয়া প্রাচীন নিদর্শনগুলো আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে। তাই, সুদানে ঘটা এই ধরনের ঘটনা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, এই ধ্বংসযজ্ঞ সুদানের ইতিহাসের এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান