যুদ্ধ: সুদানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু!

সুদানের গৃহযুদ্ধ তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে, যা ইতোমধ্যেই দেশটির ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এই সংঘাতে উদ্বাস্তু হয়েছেন ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ, যা একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে প্রায় ৮৬ লক্ষ মানুষ দেশের অভ্যন্তরেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, আর প্রায় ৩৮ লক্ষ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন।

২০২৩ সালের ১৫ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংঘাত সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলছে। এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্য সংকটে পড়েছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল।

দারফুর রাজ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক, যেখানে আরএসএফ সম্প্রতি এল-ফাশের শহর দখলের জন্য নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। এল-ফাশের, বিশাল পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত অবশিষ্ট কয়েকটি প্রধান শহরের মধ্যে অন্যতম।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই আক্রমণে এল-ফাশের এবং এর আশেপাশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৪ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আরএসএফ এরই মধ্যে জামজাম শরণার্থী শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যেখান থেকে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর মতে, শেলিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এল-ফাশের থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে তাওয়ালা শহরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এই যুদ্ধ সুদানের বিভাজন ঘটিয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অন্যদিকে আরএসএফ দারফুরের অধিকাংশ এবং দক্ষিণের কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যানা-লেনা বেয়ারবক এই সংঘাতকে ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি ধ্বংসযজ্ঞ, দুর্ভিক্ষ এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট মিরিয়ানা স্পোলজারিক সুদানে যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে বলেছেন, সুদানের বেসামরিক নাগরিকরা ‘মৃত্যু ও ধ্বংসের অবিরাম দুঃস্বপ্নের’ মধ্যে আটকা পড়ে আছে।

জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধানী দল সতর্ক করে বলেছে, এই সংঘাতের ‘সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় এখনো উন্মোচিত হতে বাকি আছে’।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মোহাম্মদ চান্দে ওসমান বলেছেন, ‘সুদান যখন তৃতীয় বছরে পা রেখেছে, তখন আমাদের সুদানে সংঘটিত ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে এবং যারা জীবন হারিয়েছেন বা যাদের জীবন চিরতরে বদলে গেছে, তাদের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সুদানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং সংঘাত নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *