জীবনে সুখী হতে চান? তাহলে সুখের থেকেও বেশি জরুরি এই জিনিস!

একটি সুখী জীবন মানেই কি সব? নাকি এর চেয়েও গভীর কিছু আছে? সম্প্রতি, মানুষের জীবনযাত্রার গুণাগুণ নিয়ে এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টাইলার জে. ভ্যান্ডারউইলের নেতৃত্বে হওয়া ‘গ্লোবাল ফ্লারিশিং স্টাডি’ নামের এই গবেষণায় জীবনের পরিপূর্ণতা বা ‘ফ্লারিশিং’ -এর ধারণাটিকে নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ক, চরিত্র এবং আর্থিক নিরাপত্তা—এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ২২টি দেশের প্রায় ২ লক্ষ মানুষের ওপর পাঁচ বছর ধরে চলা এই গবেষণা জানাচ্ছে, জীবনের প্রকৃত আনন্দ নিহিত রয়েছে অন্য কিছুতে।

শুধু অর্থ বা খ্যাতিই নয়, বরং এর বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে যা মানুষকে সুখী করতে পারে।

গবেষণার ফল বলছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘ফ্লারিশিং’-এর অভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, মহামারীর প্রভাব, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা—এসব কারণে তারা মানসিক চাপে ভুগছে। অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে কম উন্নত দেশগুলোতে, যেমন ইন্দোনেশিয়া, মানুষের মধ্যে জীবনের গভীরতা এবং উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষের গড় ‘ফ্লারিশিং স্কোর’ ৮.৪৭, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৭.১৮। এমনকি, মাথাপিছু আয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও, জীবনের গভীরতা এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অনেক বেশি। এই বিষয়গুলো তাদের জীবনে অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জাপানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত হলেও, সেখানকার মানুষের মধ্যে ‘ফ্লারিশিং’-এর অভাব রয়েছে। জন্মহার কমে যাওয়া, সামাজিক সম্পর্ক কমে যাওয়া, এবং ধর্মীয় অনুভূতির অভাব এর কারণ হতে পারে।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য প্রয়োজন সামাজিক সম্পর্ক, সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকা এবং জীবনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। যারা নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তাদের মধ্যে ‘ফ্লারিশিং’-এর মাত্রা বেশি দেখা যায়।

এছাড়া, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, অন্যের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া—এসবও মানুষকে সুখী করতে সাহায্য করে।

সিঙ্গাপুরের ২৪ বছর বয়সী ব্র্যান্ডন কোয়াকের কথা ভাবুন। যিনি বর্তমানে দর্শনের ছাত্র, ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কাজ খুঁজছেন। তিনি বলছেন, জীবনের উন্নতির জন্য প্রয়োজন নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানানো।

এই গবেষণা থেকে আমরা বুঝতে পারি, জীবনের পরিপূর্ণতা কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই, আমাদের সবারই চেষ্টা করা উচিত—সামাজিক সম্পর্কগুলোকে আরও দৃঢ় করা, নিজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দ খুঁজে নেওয়া।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের জীবনে ‘ফ্লারিশিং’-এর জন্য শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন গভীরতর কিছু—যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থ যোগ করে।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *