আতঙ্কে গর্ভবতী মায়েরা! শীর্ষ আদালতের শুনানিতে কি হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আসন্ন এক মামলার শুনানির দিকে উদ্বেগের সঙ্গে তাকিয়ে আছেন দেশটির অভিবাসী মহিলারা। এই মামলার রায় তাদের এবং তাদের অনাগত সন্তানদের নাগরিকত্বের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেওয়া একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

আদালতে শুনানির মূল বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসন কতটুকু ক্ষমতা রাখে, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে। যদি আদালত ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তবে এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্বের বিষয়টি বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, নিউ জার্সিতে জন্ম নেওয়া কোনো শিশু যদি নাগরিকত্বের সুবিধা পায়, তবে পেনসিলভানিয়ায় জন্ম নেওয়া একই পরিস্থিতিতে থাকা অন্য কোনো শিশু হয়তো সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু হলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী। এই সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সকল ব্যক্তি, তাদের বাবা-মায়ের অভিবাসন পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, তারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকারী হবেন।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এই যুক্তিতে ভিন্নমত পোষণ করে যে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ‘অধীনস্থ’ ব্যক্তিরাই নাগরিকত্বের যোগ্য।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা, তবে অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত এমন অনেক নারী এই মামলার রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মনিকা, যিনি ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন।

তিনি তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত, কারণ ট্রাম্পের এই নীতি কার্যকর হলে তার সন্তান হয়তো নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

আরেক নারী হলেন মেনি, যিনি হন্ডুরাস থেকে এসেছেন। তিনিও তার অনাগত সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তিত। তারা দুজনেই চান, তাদের সন্তানেরা যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

এই মামলার রায় শুধু ব্যক্তি বিশেষের জীবনকেই প্রভাবিত করবে না, বরং এর মাধ্যমে ক্ষমতার বিভাজন নিয়েও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন চায়, আদালত যেন তাদের নির্বাহী ক্ষমতাকে আরও বেশি স্বীকৃতি দেয়।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়াতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র এই মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর মাধ্যমে অন্যান্য অনেক নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এই মামলার রায় সম্ভবত জুন মাসের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে। রায় ঘোষণার পর অভিবাসী নারীদের উদ্বেগ কতটা কমে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *