যুক্তরাষ্ট্রে সমকামিতা পরিবর্তনের ‘থেরাপি’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি: বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট-এ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। এই মামলার মূল বিষয় হলো, কোনো রাজ্যে তরুণ, বিশেষ করে যাদের বয়স আঠারোর নিচে, তাদের ‘রূপান্তর থেরাপি’ (Conversion Therapy) নিষিদ্ধ করা যাবে কিনা।
এই থেরাপি হলো এমন একটি বিতর্কিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যা সমকামী (gay) অথবা রূপান্তরকামী (transgender) ব্যক্তিদের যৌন অভিমুখিতা বা লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের চেষ্টা করে।
এই মামলার সূত্রপাত হয়েছে কলোরাডো রাজ্যের একটি আইনকে কেন্দ্র করে। কলোরাডোর আইন অনুযায়ী, কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট বা পরামর্শদাতা (counselor) শিশুদের উপর রূপান্তর থেরাপি প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ক্যালি চাইলস নামের একজন থেরাপিস্ট এই আইনের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো, এই আইন তাঁর ‘কথোপকথন’-এর অধিকার খর্ব করছে, যা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে (First Amendment) প্রদত্ত বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী।
ক্যালি চাইলস মনে করেন, তাঁর ক্লায়েন্টরা স্বেচ্ছায় তাঁর কাছে আসেন এবং তাঁদের মূল লক্ষ্য হলো তাঁদের শরীরের প্রতি আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা।
এই মামলার শুনানিতে উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। কলোরাডো রাজ্যের আইনজীবীরা বলছেন, রূপান্তর থেরাপি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
তাঁদের মতে, এই থেরাপি নিলে অনেক শিশু হতাশায় ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো চিন্তাভাবনা করে। অন্যদিকে, ক্যালি চাইলসের আইনজীবীরা বলছেন, এই আইন তাঁদের ক্লায়েন্টদের তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।
তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, থেরাপিস্টরা তাঁদের রোগীদের সাথে কী বিষয়ে কথা বলতে পারবেন, সে বিষয়ে সরকার কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে না।
এই মামলাটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সারা বিশ্বের মানবাধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, রূপান্তর থেরাপি নিয়ে বিতর্ক বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যেখানে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের অধিকার এখনো পুরোপুরি স্বীকৃত নয়, সেখানেও বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রে এই মামলার রায় এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, বাক-স্বাধীনতা এবং শিশুদের সুরক্ষার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য তৈরি করবে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত শুধু কলোরাডোর জন্যই প্রযোজ্য হবে না, বরং অন্যান্য রাজ্য এবং এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
এই মামলার রায় বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। কারণ, এখানেও যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার এবং তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়।
যদিও রূপান্তর থেরাপির ধারণাটি বাংলাদেশে ততটা পরিচিত নয়, তবে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই মামলার রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)