ধর্ম নিয়ে মতবিরোধ: সুপ্রিম কোর্টে চরম বিভাজন!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়েছে, যেখানে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন নিয়ে অভিভাবকদের অধিকারের বিষয়টি সামনে এসেছে। মন্টগোমারি কাউন্টি স্কুল বোর্ডের একটি নীতির বিরুদ্ধে অভিভাবকদের করা মামলায়, তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কিছু বিষয় থেকে সরিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে কিনা, তা নিয়ে প্রধান বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য এবং যৌন অভিমুখীতা বিষয়ক আলোচনা।

মামলার শুনানিতে বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একটি নিয়মিত চিত্র। রক্ষণশীল বিচারপতিরা অভিভাবকদের উদ্বেগের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও, উদারপন্থী বিচারপতিরা এর সম্ভাব্য ফলস্বরূপ পাঠ্যক্রমের ওপর প্রভাব এবং বিদ্যালয়ে বিভাজন তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

মামলার মূল বিষয় ছিল, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের কিছু বিশেষ পাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে কিনা, যদি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, শিশুদের ধর্মীয় বিকাশে বাধা দেয় এমন বিষয় থেকে তাদের দূরে রাখার অধিকার তাদের রয়েছে।

অন্যদিকে, স্কুল বোর্ড জানায়, এই ধরনের পদক্ষেপ পাঠ্যক্রমের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করবে।

এই মামলার শুনানিতে বিচারপতিদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। বিচারপতি ব্রেট কাভানাফ, যিনি ব্যক্তিগতভাবে মন্টগোমারি কাউন্টির বাসিন্দা, সেখানকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, মন্টগোমারি কাউন্টি “ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতার” ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বিচারপতি কাভানাফের মতে, অভিভাবকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানো উচিত।

অন্যদিকে, বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটও অভিভাবকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অভিভাবকদের মূল আপত্তি ছিল, শিশুদের মধ্যে ভিন্ন ধারণা তৈরি হতে পারে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে।

অন্যদিকে, বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র এবং স্যামুয়েল আলিটোর মধ্যে “আংকেল ববি’স ওয়েডিং” নামক একটি বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা যায়। বিচারপতি আলিতো শিশুদের জন্য বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, বইটিতে একটি পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে, বিচারপতি সোটোমেয়র জানান, শিশুরা মূলত তাদের চাচার বিয়ে নিয়ে নয়, বরং বিয়েতে তার চাচার অনুপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিল।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস, শিশুদের ওপর শিক্ষকদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে শিক্ষকের বক্তব্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তা বিবেচনা করা দরকার।

এই মামলার রায় ভবিষ্যতে শিক্ষা বিষয়ক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, শিশুদের পাঠ্যক্রম এবং অভিভাবকদের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *