সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কি ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হতে পারে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার জেরে সেখানকার লাইব্রেরি, স্কুল এবং হাসপাতালগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ হুমকির মুখে পড়েছে। এই মামলার মূল বিষয় হল, ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) কিভাবে কম আয়ের মানুষের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা সহজলভ্য করতে তহবিল সংগ্রহ করে।

সমালোচকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘নন-ডেলেগেশন ডকট্রিন’ লঙ্ঘন করে, যেখানে কংগ্রেস তার ক্ষমতা ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রায় ১০ শতাংশ পরিবারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে, গরিব মানুষের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।

এই মামলা সেই রকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এফসিসি-র মাধ্যমে পরিচালিত ‘ইউনিভার্সাল সার্ভিস ফান্ড’ (Universal Service Fund) নামে একটি তহবিল রয়েছে, যা টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে।

এই তহবিলের অর্থ স্কুল, লাইব্রেরি এবং হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ কমাতে সাহায্য করে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে এফসিসি কার্যত একটি পরোক্ষ কর আরোপ করে এবং এর মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

তারা মনে করেন, এই ধরনের তহবিল সংগ্রহের দায়িত্ব সরাসরি কংগ্রেসের হাতে থাকা উচিত। এই বিষয়ে মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণকারী আইনজীবীরাও একই মত প্রকাশ করেছেন।

তাদের মতে, বিদ্যমান পদ্ধতিতে তহবিলের হার ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু এর ফল কমে যাচ্ছে, যা এই প্রোগ্রামটিকে অচল করে দিতে পারে।

অন্যদিকে, এই প্রোগ্রামের সমর্থকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ দরিদ্র এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ আরও কমিয়ে দেবে।

তাদের মতে, এর ফলে ই-রেট (E-Rate) এবং লাইফলাইন (Lifeline)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা কয়েক মিলিয়ন মানুষকে ইন্টারনেট থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

এই মামলার রায় জুন মাসের শেষ নাগাদ আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।

বাংলাদেশেও সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।

ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *