হ্যান্ডগান ইস্যুতে শীর্ষ আদালতের বড় সিদ্ধান্ত! বন্দুক আইনের ভবিষ্যৎ কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট, নিউ ইয়র্কের একটি বিতর্কিত বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রাজি হয়নি। এই আইনের মূল বিষয় হলো, হ্যান্ডগান বা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অনুমতি পেতে হলে আবেদনকারীকে “নৈতিক চরিত্রের অধিকারী” হতে হবে।

সোমবারের এই সিদ্ধান্তের ফলে, জনসাধারণের জন্য অস্ত্র বহন সীমিত করার লক্ষ্যে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের করা কিছু বিধিনিষেধ বহাল থাকছে। এর মধ্যে স্কুল, পার্ক ও থিয়েটারের মতো ‘সংবেদনশীল স্থানগুলোতে’ অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্যতম।

এই রায়টি মূলত নিউ ইয়র্কের কর্মকর্তাদের এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সমর্থনকারীদের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, এর মাধ্যমে তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত তাদের নীতিগুলো বহাল রাখতে সক্ষম হলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের পর, যেখানে আমেরিকান নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অধিকারকে আরও প্রসারিত করা হয়েছিল, এই ধরনের বিধিনিষেধগুলো অনুমোদনের চেষ্টা করা হচ্ছিল।

আদালত তার এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেনি এবং কোনো ভিন্নমতও পাওয়া যায়নি।

নিউ ইয়র্কের আইন অনুযায়ী, একটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে “নৈতিক চরিত্রের অধিকারী” প্রমাণ করতে হয়।

আইনে এই ‘নৈতিক চরিত্র’-এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে— “একজন ব্যক্তির অস্ত্র বহনের উপযুক্ত চরিত্র, মেজাজ এবং বিচারবুদ্ধি থাকতে হবে, যাতে সে নিজের বা অন্যের ক্ষতি না করে।”

এই আইনে আরও কিছু স্থানকে ‘সংবেদনশীল স্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ।

এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম এবং টাইমস স্কয়ারের মতো জনবহুল স্থান। অন্যান্য রাজ্যগুলোও এখন এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

এই আইনের বিরুদ্ধে অস্ত্র অধিকার গোষ্ঠীগুলোর বক্তব্য হলো, সংবেদনশীল স্থানের তালিকাটি “প্রায় পুরো নিউ ইয়র্ক রাজ্যকে” অন্তর্ভুক্ত করে এবং অস্ত্র বহনকে এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে যে, এমনকি আইন মান্যকারী ব্যক্তিরাও অস্ত্র বহন করতে ভয় পাবে।

এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন পাঁচজন নিউ ইয়র্কবাসী, যাদের অস্ত্র বহনের লাইসেন্স ছিল এবং একজন ব্যক্তি, যিনি লাইসেন্স পেতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

বাদীগণ জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন।

আদালতে এই মামলার শুনানি আগে একাধিকবার হয়েছে এবং আদালতের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলো এর ওপর প্রভাব ফেলেছে। মূলত, এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের ২০২২ সালের ‘নিউ ইয়র্ক স্টেট রাইফেল অ্যান্ড পিস্তল অ্যাসোসিয়েশন বনাম ব্রুয়েন’ মামলার সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে গঠিত।

সেই মামলায়, নিউ ইয়র্কের একটি আইনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল—বাড়ির বাইরে হ্যান্ডগান বহনের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীকে ‘যুক্তিযুক্ত কারণ’ দর্শাতে হবে।

সোমবারের এই সিদ্ধান্তটি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রুয়েন মামলার ধারাবাহিকতায় আসা আপিলগুলোর মধ্যে একটি, যা আদালত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। বিচারপতিরা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে দ্বিতীয় সংশোধনী সম্পর্কিত আরও কিছু আপিল বিবেচনা করছেন, যার মধ্যে মেরিল্যান্ডে কিছু আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।

আদালত, নিউ ইয়র্কের আইন বাতিল করার পাশাপাশি, বন্দুক নিষেধাজ্ঞার পর্যালোচনার জন্য একটি নতুন, ঐতিহাসিক মানদণ্ডও স্থাপন করেছে।

আদালতের রায় অনুযায়ী, একটি বন্দুক আইনকে বিচারিক পর্যালোচনার জন্য টিকে থাকতে হলে, সেই আইনের সঙ্গে জাতির প্রতিষ্ঠার সময়ের বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কিছু না কিছু সম্পর্ক থাকতে হবে।

এই রায়ের ফলে নিম্ন আদালতগুলোতে এই সম্পর্ক ঠিক কতটা গভীর হতে হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

তবে, সুপ্রিম কোর্ট গত বছর একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিষয়টি কিছুটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিল।

আদালত সেই সময় একটি ফেডারেল আইন বহাল রেখেছিল, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের অস্ত্র রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।

নিউ ইয়র্কের মামলাটি পর্যালোচনা করার পর, ২য় ইউএস সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস গত বছর রাজ্যের আইনের অধিকাংশ বহাল রাখে।

তবে, আদালত কিছু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খুচরা প্রতিষ্ঠানে, যেমন—সুপারমার্কেট ও রেস্তোরাঁয়—অস্ত্র বহনের ওপর রাজ্যের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *