মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট অ্যারিজোনার আদিবাসী অ্যাপাচি সম্প্রদায়ের পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত একটি স্থানে বিশাল তামার খনি প্রকল্প চালুর বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, বহুজাতিক কোম্পানি রেস্যুলেশন কপার, যারা রিও টিন্টো এবং বিএইচপি’র একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, তাদের এই বিতর্কিত খনি প্রকল্প নির্মাণের পথে আর কোনো বাধা রইলো না।
অ্যাপাচি সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই খনিটিকে তাদের ধর্মীয় অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
**ঐতিহ্য ও উন্নয়নের সংঘাত**
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, অ্যারিজোনার টন্টো ন্যাশনাল ফরেস্টের ‘ওক ফ্ল্যাট’ নামক স্থানটি অ্যাপাচি সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তাদের সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এই ভূমির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
অ্যাপাচি সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, খনি প্রকল্পটি চালু হলে তাদের পবিত্র স্থানটি ধ্বংস হয়ে যাবে, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি চরম আঘাত হানবে। অন্যদিকে, খনি কর্তৃপক্ষ এবং এর সমর্থকরা বলছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যারিজোনার অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে এবং স্থানীয়ভাবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এই প্রকল্পের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তারা বলছেন, বিশ্বে তামার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাণ্ডার এখানেই রয়েছে এবং এর উত্তোলন দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমি ও সংস্কৃতির অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে।
**আদালতের রায় এবং এর প্রতিক্রিয়া**
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যাপাচি সম্প্রদায়। বিচারপতি গোরসাচ এই রায়কে ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি তাঁর আপত্তিতে উল্লেখ করেছেন, ‘ওক ফ্ল্যাটের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার দীর্ঘদিন ধরে এই ভূমি এবং অ্যাপাচিদের এখানে প্রবেশের অধিকার রক্ষা করেছে। কিন্তু এখন সরকার ও একটি খনি কোম্পানি ওক ফ্ল্যাটকে মাটির নিচে বিশাল গর্তে পরিণত করতে চাইছে।’
আদালতের এই রায়ের ফলে, ২০১৬ সালে কংগ্রেসের অনুমোদন দেওয়া ভূমি বিনিময়ের চুক্তিটি বহাল থাকছে। এই চুক্তির মাধ্যমে রেস্যুলেশন কপার অ্যারিজোনার প্রায় ৯.৭১ বর্গকিলোমিটার বনভূমি পাবে এবং এর বিনিময়ে তারা রাজ্যের মালিকানাধীন আটটি ভূমিখণ্ড দেবে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় কাজ করা ‘অ্যাপাচি স্ট্রংহোল্ড’ নামক একটি সংগঠন এই ভূমি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল, এই প্রকল্পের কারণে তাদের সদস্যদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘিত হবে এবং ১৮৫২ সালের একটি ঐতিহাসিক চুক্তিরও বরখেলাপ হবে।
যদিও নিম্ন আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ এই রায় তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, আদিবাসী অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যেকার জটিল সম্পর্ক নতুন করে সামনে এসেছে। একদিকে উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা, অন্যদিকে একটি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস