সপ্তম শতকের অ্যাংলো-স্যাক্সন ‘ভূতের জাহাজ’ সমাধির জন্য বিখ্যাত ইংল্যান্ডের সাটন হু অঞ্চলে, সম্প্রতি এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ষষ্ঠ শতকের এক রহস্যময় পাত্রের সম্পূর্ণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার অ্যাংলো-স্যাক্সনদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে, যা আগে অজানাই ছিল।
সাটন হু ন্যাশনাল ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে হওয়া এই খননে পাওয়া ‘ব্রোমেসওয়েল বালতি’ নামের পাত্রটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের তৈরি। ধারণা করা হয়, এটি আধুনিক তুরস্কের অ্যান্টিওক থেকে তৈরি হয়ে ব্রিটেনের পূর্বাঞ্চলে এসেছিল।
১৯৮৬ সালে প্রথম এর কিছু অংশ পাওয়া গিয়েছিল, তবে বালতির মূল ভিত্তিটি ছিল অধরা।
গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই বালতির উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ বালতির গায়ে উত্তর আফ্রিকার শিকারের দৃশ্য খোদাই করা ছিল, যেখানে যোদ্ধা, অস্ত্রশস্ত্র, সিংহ এবং একটি শিকারি কুকুর দেখা যায়।
নতুন খননে বালতির ভিত্তি আবিষ্কারের ফলে এই রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। এর সাথে পাওয়া গেছে মানব ও পশুর পোড়া দেহাবশেষ, যা বালতিটি কেন সমাধিস্থ করা হয়েছিল, সেই সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
গত গ্রীষ্মে হওয়া খননে বালতির ভিতের অংশ পাওয়া যায়, যেখানে এর নকশা এবং যোদ্ধাদের মুখাবয়ব স্পষ্ট দেখা যায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর ভেতরে পাওয়া গেছে পোড়া মানব ও পশুর দেহাবশেষ। এছাড়াও, পাওয়া গেছে অক্ষত একটি চিরুনি, যা সম্ভবত সমাধিস্থ ব্যক্তির ডিএনএ-এর প্রমাণ বহন করতে পারে।
ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটি স্ক্যান ও এক্স-রের মাধ্যমে পরীক্ষা করার পর, এই বালতির ভেতরের মাটি থেকে পোড়া মানুষের হাড় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পায়ের গোড়ালি এবং মাথার খুলির কিছু অংশ ছিল।
এছাড়াও, পশুর হাড়ের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত শূকরের চেয়ে বড় কোনো প্রাণীর ছিল। গবেষকদের মতে, ঘোড়া সাধারণত অ্যাংলো-স্যাক্সনদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হতো, যা মৃতের উচ্চ সামাজিক মর্যাদার প্রতীক ছিল।
হাড়ের স্তূপ এবং কিছু অজানা তন্তু দেখে মনে করা হচ্ছে, দেহাবশেষগুলো সম্ভবত কোনো ব্যাগে রাখা হয়েছিল, যা বালতির মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল।
বালতির বাইরের দিকেও কিছু হাড়ের টুকরা পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে, এগুলো বালতির সঙ্গে একই সময়ে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
এই মানব ও পশুর হাড়গুলো থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য রেডিওকার্বন ডেটিং করা হচ্ছে।
সাটন হুর অন্যান্য সমাধিস্থলে মাটির পাত্র এবং ব্রোঞ্জনির্মিত বাটিতে মৃতদেহ পাওয়া গেলেও, এই ধরনের বালতিতে পোড়া দেহাবশেষ পাওয়া যাওয়া সত্যিই বিরল ঘটনা।
ন্যাশনাল ট্রাস্টের প্রত্নতত্ত্ব ও এনগেজমেন্ট ম্যানেজার লরা হাওয়ার্থের মতে, এই আবিষ্কার অ্যাংলো-স্যাক্সনদের সমাধিক্রিয়া সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বালতির ভেতরে পাওয়া চিরুনিটি ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। এটি সম্ভবত পশুর শিং বা হাড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
এই ধরনের চিরুনি নারী ও পুরুষ উভয়ের সমাধিস্থলে পাওয়া গেছে। বিভিন্ন আকারের চিরুনি ইঙ্গিত করে যে, এগুলো চুল, দাড়ি এবং উকুন পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা হতো।
গবেষকরা এখনো পর্যন্ত সমাধিস্থ ব্যক্তির লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারেননি, তবে চিরুনি থেকে ডিএনএ-র মাধ্যমে তার পরিচয় জানার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, বালতির ভেতরে পাওয়া পাতা এবং অন্যান্য উদ্ভিদের অবশেষ থেকে সে সময়ের জলবায়ু এবং পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
ন্যাশনাল ট্রাস্টের প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যাঙ্গাস ওয়াইনরাইটের মতে, “আমরা সবসময় জানতে চেয়েছি, কেন এই বালতি সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এখন আমরা জানতে পেরেছি যে, এটি সাটন হুর কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দেহাবশেষ ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।”
এই বালতির উৎপত্তিস্থল এবং এটি কীভাবে ইংল্যান্ডে এসেছিল, তা এখনো একটি রহস্য। গবেষকদের ধারণা, এটি হয়তো কোনো কূটনৈতিক উপহার ছিল অথবা কোনো ভাড়াটে স্যাক্সন সৈন্য সংগ্রহ করেছিল।
সাটন হুর এই নতুন গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে খনন কাজ শুরু হয়েছিল, যা ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলেছিল।
এই আবিষ্কার অ্যাংলো-স্যাক্সন জীবন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন