৫ বছর আগে সুজানের অন্তর্ধান: কী ঘটেছিল?

সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী সুজান মরফুর পাঁচ বছর আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এখনও আমেরিকার মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। মা দিবসের ছুটিতে সাইকেল চালানোর সময় তিনি নিখোঁজ হন।

এরপর তার স্বামী ব্যারি মরফুকে সন্দেহ করা হলেও, ঘটনার জট এখনো খোলেনি।

২০২০ সালের ৯ই মে, সুজান তার বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তার বাইক ও হেলমেট দুটি আলাদা স্থান থেকে পাওয়া গেলেও, সেগুলোতে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

ঘটনার পর ব্যারি মরফু সামাজিক মাধ্যমে সুজানের ফিরে আসার আকুতি জানালেও, তাদের দাম্পত্য কলহের কথা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে।

তদন্তে জানা যায়, তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো এবং সুজানের অন্য সম্পর্ক ছিল।

এমনকি ব্যারিকে একবার বলতে শোনা যায়, ‘ঈশ্বর হয়তো এই ঘটনার মাধ্যমে কোনো কিছুর সমাধান করছেন।’

২০২১ সালের ৫ই মে, ব্যারি মরফুকে সুজানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই সঙ্গে, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করারও অভিযোগ আনা হয়।

বিচারের সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জামিনে মুক্তি পান।

যদিও ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হয়।

এরপর ব্যারি ক্ষতিপূরণ চেয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের মামলা করেন, যা পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।

আশ্চর্যজনকভাবে, ব্যারিকে সুজানের নামে ভোট দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

তিনি দোষ স্বীকার করার পর কারাদণ্ড এড়িয়ে যান।

তদন্তকারীরা জানান, ব্যারি সম্ভবত চেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতুক, সেই কারণে তিনি এমনটা করেছিলেন।

এরপর আসে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস।

সুজানের দেহাবশেষ তার বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে পাওয়া যায়।

এরপর এল পাসো কাউন্টির ময়না তদন্তের রিপোর্টে তার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যদিও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো অভিযুক্ত করা হয়নি।

সুজান মরফু কে ছিলেন?

সুজান ১৯৭০ সালের ৩০শে এপ্রিল, ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন।

তার দুই ভাইবোন ছিলেন।

সুজান ও ব্যারি ইন্ডিয়ানায় পরিচিত হন এবং ২০১৮ সালে কলোরাডোতে চলে আসেন।

তাদের ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে ম্যালোরি ও মেইসি নামের দুটি মেয়ে ছিল।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ব্যারি ছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, আর সুজান ছিলেন গৃহিণী।

সুজানের উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ওজন ছিল ১২০ পাউন্ড।

নীল চোখ ও বাদামী চুলের সুজান ক্যান্সারের সঙ্গে দু’বার লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন এবং পর্বতারোহণেও তার বেশ আগ্রহ ছিল।

সুজানের নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে ব্যারি কর্তৃপক্ষের কাছে জানান, তারা একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন এবং এরপর ঘুমোতে যান।

ব্যারি আরও জানান, পরের দিন সকালে তিনি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, তখন সুজানকে বিছানায় দেখতে পাননি।

তিনি ও তার মেয়েরা সুজানকে ‘শুভ মা দিবস’ জানিয়ে বার্তা পাঠালেও, কোনো উত্তর পাননি।

তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার দিন ব্যারি তার অফিসের কাজে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে পাঁচটি স্থানে আবর্জনা ফেলেছেন।

তাদের ধারণা, তিনি সম্ভবত এর মধ্যে কোনো একটি স্থানে সুজানের ব্যবহৃত কিছু জিনিস ফেলেছিলেন।

২০২০ সালের আগস্টে ব্যারি এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি মনে করেন, শেরিফের দপ্তর এই ঘটনার তদন্তে গাফিলতি করেছে এবং তার স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়া তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, সুজানের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর ব্যারি তার আইনজীবীর মাধ্যমে জানান, তিনি ও তার মেয়েরা ‘গভীর শোকাহত’।

তারা সবসময় বিশ্বাস করতেন, সুজান একদিন তাদের কাছে ফিরে আসবে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, সুজানের শরীরে কিছু ঔষধের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং এটি হত্যার একটি কারণ হতে পারে।

ব্যারি জানিয়েছিলেন, তিনি সাধারণত বন্যপ্রাণীকে অচেতন করতে এই ওষুধ ব্যবহার করতেন।

বর্তমানে, সুজানের মৃত্যুরহস্য এখনো একটি অমীমাংসিত বিষয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *