সুইডেনের গ্রীষ্মকালীন উৎসব: এক ঝলকে মিস্টমারের উদযাপন। সারা বিশ্বে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উৎসবের এক ভিন্ন আমেজ থাকে, যা ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও রঙিন করে তোলে।
তেমনই একটি উৎসব হলো সুইডেনের মিস্টমার (Midsummer)। গ্রীষ্মের আগমনে পালিত হওয়া এই উৎসবটি শুধু সুইডেনেই নয়, বরং সারা বিশ্বের অনেক মানুষের কাছেই এখন বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
এটি মূলত গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিনটিকে উদযাপন করার একটি উৎসব, যেখানে প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্য আর খাদ্যরসিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখা যায়।
মিস্টমারের মূল আকর্ষণ হলো “মেপোল” (Maypole)। ফুল ও লতা দিয়ে সজ্জিত লম্বা একটি খুঁটি, যা উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করা হয়।
এই খুঁটিকে ঘিরে সকলে দলবদ্ধভাবে গান করে ও নাচে, যা ঐ অঞ্চলের মানুষের আনন্দ আর উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এদের মধ্যে অন্যতম হলো নতুন আলু, হেরিঙ মাছ (herring), এবং বিভিন্ন ধরনের সালাদ।
এছাড়াও, “গুবররা” (gubbröra) নামক একটি বিশেষ পদ পরিবেশন করা হয়, যা স্প্রাট মাছ, ডিম, মেয়নিজ ও মশলার মিশ্রণে তৈরি করা হয়।
সুইডিশ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই মিস্টমার উৎসব।
এই উৎসবে স্থানীয়রা তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দ করে। অনেকে আবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটায়।
এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
সুইডেনের বাইরে থেকেও অনেকে এই উৎসবে যোগ দিতে আসে।
পর্যটকদের জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা হয়, যেখানে তারা স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ডালারনা প্রদেশের ট্যালবার্গে (Tällberg) ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য ও গানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া, স্কেনের রিংজোন (Ringsjön) লেকের পাশে অবস্থিত বোসজোক্লাস্টার (Bosjökloster) নামক একটি স্থানেও এই উৎসবের বিশেষ আয়োজন করা হয়।
এখানে আগতরা ঐতিহ্যবাহী খাবার উপভোগ করার পাশাপাশি মেপোল নাচের আনন্দেও যোগ দিতে পারে।
সুইডেনের এই গ্রীষ্মকালীন উৎসব, মিস্টমার, শুধু একটি আনন্দ উৎসব নয়, এটি সেখানকার মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।
এটি প্রকৃতি ও মানুষের ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে আজও বিশেষভাবে সমাদৃত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক