পশ্চিমের দেশ সুইডেনে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি, দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশ সুপারমার্কেট বয়কট করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। খবর অনুযায়ী, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সুইডিশ নাগরিকরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সুইডেনে জীবনযাত্রার ব্যয়ের হিসাব করলে দেখা যায়, পরিবার প্রতি খাদ্য কেনার খরচ ২০২১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে প্রায় ৩১,০০০ সুইডিশ ক্রোনা বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। একটি কফির প্যাকেট কিনতে এখন প্রায় ১00 সুইডিশ ক্রোনা লাগছে, যা গত বছরের শুরুর দিকের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, গত সোমবার থেকে দেশটির বৃহত্তম সুপারমার্কেটগুলোতে এক সপ্তাহের জন্য বয়কট কর্মসূচি পালন করা হয়। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে এই বয়কটের প্রচার ব্যাপকতা লাভ করে। প্রতিবাদকারীরা বাজারের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য সুপারমার্কেটগুলোর মধ্যে ‘একচেটিয়া কারবার’ এবং বড় উৎপাদকদের মুনাফা-সর্বস্বতাকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের পরিবর্তে নিজেদের লাভের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
অন্যদিকে, সুপারমার্কেটগুলো বলছে, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পণ্যের দাম, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণের জন্য এমনটা হচ্ছে।
এই প্রতিবাদ শুধু সুইডেনেই সীমাবদ্ধ নয়। বুলগেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশেও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে একই ধরনের বয়কট দেখা গেছে।
বয়কটের অংশ হিসেবে, ভোক্তারা লিডল, হেমকপ, আইকা, কোপ এবং উইলস-এর মতো বড় সুপারমার্কেটগুলোতে কেনাকাটা বন্ধ করে দেন। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, তাদের হারানোর কিছু নেই, বরং পাওয়ার আছে অনেক কিছু। তাদের দাবি, খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে, যেখানে খাদ্য প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাভ করছে।
বাজার গবেষণা সংস্থা ‘ম্যাটপ্রিসকলেন’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চকলেটের দাম, যা প্রায় ৯.২ শতাংশ। রান্নার তেলের দাম ৭.২ শতাংশ এবং পনিরের দাম ৬.৪ শতাংশ বেড়েছে। দুধ ও ক্রিমেও মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, যা ছিল ৫.৪ শতাংশ।
তবে, এই বয়কটের কার্যকারিতা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই ধরনের প্রতিবাদ হয়তো সাময়িক সচেতনতা তৈরি করতে পারে, কিন্তু বাজারের উপর এর তেমন প্রভাব নাও পড়তে পারে।
বয়কটের অন্যতম উদ্যোক্তা, মালমোর শিক্ষার্থী ফিলিপা লিন্ড বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে তিনি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত এবং অন্যদের প্রতি সংহতি জানাতে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি সরকারের প্রতি এই ‘একচেটিয়া কারবার’ ভাঙার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বর্তমানে, তারা সুইডেনের বৃহত্তম মুদি দোকান আইকা এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী কোম্পানি আর্লার বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহের জন্য বয়কট করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের লক্ষ্য, ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানিকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা।
সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রী পিটার কুলগ্রেন বলেছেন, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক কারণগুলো দায়ী। তবে, তিনি বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়াও, সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য শিল্পে আরও ভালো প্রতিযোগিতা আনতে চাইছে।
সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বয়কটের কারণে তাদের বিক্রি কিছুটা কমেছে। তবে, তারা এর কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি। আইকা-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছু দোকানে এর প্রভাব পড়েছে, তবে সব দোকানে পরিস্থিতি একরকম নয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান