সুইডেনের একটি পরিবেশ-বান্ধব রিসোর্ট পরিচালনা করা এক দম্পতি, যারা বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ঋণ রেখে যান এবং ১৫৮ ব্যারেল মানব বর্জ্য ফেলে দেশ ত্যাগ করেন। ঘটনাটি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা গেছে, ফ্লেমিং হ্যানসেন এবং মেত্তে হেলব্যাক নামের এক ডেনিশ দম্পতি সুইডেনের হল্যান্ড অঞ্চলে ‘স্টেডসেন্স’ নামে একটি পরিবেশ-বান্ধব রিসোর্ট চালাতেন। গত বছর তারা এই রিসোর্টটি বন্ধ করে গুয়াতেমালায় পাড়ি জমান। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সুইডেন ও ডেনমার্কের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের কাছে বিশাল অঙ্কের টাকা পাওনা রেখে গিয়েছেন।
গণমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই দম্পতি তাদের রিসোর্টে কম্পোস্ট টয়লেট ব্যবহার করতেন এবং সেই টয়লেট থেকে নির্গত ১৫৮ ব্যারেল মানব বর্জ্য তারা রিসোর্টের পেছনে ফেলে যান। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এটি পরিবেশগত অপরাধের শামিল। তাছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে বর্জ্য জল জঙ্গলে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে কিছু পশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও শোনা যায়।
তবে, হ্যানসেন ও হেলব্যাক তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুইডেনের গ্রামীণ এলাকার স্বাভাবিক নিয়মকানুন মেনেই কাজ করেছেন। তারা আরও জানান, এই ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পারমাকালচার নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পারমাকালচার হলো টেকসই কৃষি এবং স্বনির্ভরতার একটি পদ্ধতি।
দম্পতির মতে, ওই ব্যারেলগুলো কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত এবং তাদের নতুন মালিকও বিষয়টি জানেন। তাদের আরও দাবি, “এই বসন্তে এর অর্ধেক এবং এক বছর পর বাকিগুলো ব্যবহারের উপযোগী হবে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রধান ড্যানিয়েল হেলসিং বলেছেন, ওই দম্পতি বর্জ্য কম্পোস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন অনুসরণ করেননি। তার মতে, সাধারণত, যাদের জল শৌচাগার (water closet) নেই, তাদের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করে থাকে।
সুইডিশ পর্যটন সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা স্টেডসেন্সে ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন। এই ঘটনায় তারা বিস্মিত।
হ্যানসেন ও হেলব্যাক এই ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করেছেন। তারা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, পরিবেশের ক্ষতি বা পশুদের মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী নন।
দম্পতি আরও জানান, তাদের কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং ডেনমার্কে তাদের বিশাল ট্যাক্স ঋণ রয়েছে, যা সুদ এবং বিভিন্ন ফি-সহ ১০ গুণ বেড়েছে। ডেনিশ ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তারা “নির্মম” এবং “আত্মকেন্দ্রিক”।
জানা গেছে, হ্যানসেনের সুইডিশ ট্যাক্স এজেন্সির কাছে প্রায় ৭ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি) ঋণ ছিল। গুয়াতেমালায় যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, তারা তাদের পরিবারকে একটি “দ্বিতীয় সুযোগ” দিতে চেয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান