নতুন ধারণায় ‘দলবদলু’ ভোটারের সংজ্ঞা: ভোট দেওয়ার ধরনেও বদল।
গণতন্ত্রে ভোটাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভোটারদের ভূমিকা অপরিহার্য।
সাধারণত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমন কিছু ভোটারদের চিহ্নিত করেন, যারা একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি সবসময় সমর্থন দেন না। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তারা দল পরিবর্তন করতে পারেন।
এদের ‘দলবদলু’ ভোটার বলা হয়। তবে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ‘দলবদলু’ ভোটারের ধারণায় পরিবর্তন এসেছে।
এখন দল বদলানোর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভোট দেওয়ার ধরন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছরে ভোটারদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু তাদের ভোট দেওয়ার ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। আগে যেখানে দল পরিবর্তন ছিল প্রধান বিষয়, সেখানে এখন অনেক ভোটার আছেন যারা হয়তো সব নির্বাচনে ভোট দেন না।
কোনো নির্বাচনে তারা ভোট দেন, আবার কোনোটিতে দেন না। এই ধরনের ভোটারদের এখন ‘দলবদলু’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ভোটারদের সংখ্যা বাড়ছে এবং এটি নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে এই ধরনের ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল। আবার, ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের পেছনেও এই শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন ছিল।
তবে, এই ভোটারদের সবসময় ধরে রাখা কঠিন। কারণ, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের তেমন গভীরতা থাকে না।
তারা বিভিন্ন কারণে ভোট দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ভোটার দল পরিবর্তন করেছেন।
কিন্তু যারা নিয়মিত ভোট দেন না, তাদের দল পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের ভোটারদের মধ্যে তরুণ, কম শিক্ষিত এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বেশি।
রাজনৈতিক দলগুলো এখন এই ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে, কারণ তাদের সমর্থন জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো এখন ভোটারদের একত্রিত করতে এবং তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
আগে যেখানে দলগুলো নির্দিষ্ট কিছু ভোটারদের ওপর বেশি মনোযোগ দিত, সেখানে এখন তারা সব ধরনের ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
এর মূল কারণ হলো, ভোটারদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ছে এবং তারা এখন কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন না।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক বিশ্বে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি ব্যস্ত এবং তাদের হাতে সময় কম।
তাই তারা সব নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমের কারণে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ধারণা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
তাই একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি তাদের আনুগত্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনগুলোতে দলগুলোর কৌশলও পরিবর্তিত হয়েছে। আগে যেখানে দলগুলো শুধুমাত্র তাদের সমর্থক ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করত, সেখানে এখন তারা নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে।
এর ফলে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হিসাবও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে পারে।
এছাড়াও, দলগুলোকে ভোটারদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করতে হবে।
ভোট প্রদানের এই নতুন ধারণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানেও অনেক ভোটার আছেন যারা সব নির্বাচনে ভোট দেন না।
তাদের ভোট দেওয়ার ধরনে পরিবর্তন আনা গেলে নির্বাচনের ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব আসতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
তথ্যসূত্র: সিএনএন