সিরিয়ার সুয়েদা প্রদেশে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা’ সম্প্রতি বিবদমান বেদুইন উপজাতিদের প্রতি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং গৃহযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রথমে সরকারি বাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে এলেও পরে তারা বেদুইনদের পক্ষ নেয়। এরপরই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে।
সম্প্রতি, বৃহস্পতিবার রাতে সুয়েদার দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইসরায়েলও এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে, সিরীয় বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালায়।
পরে একটি যুদ্ধবিরতি হয়।
আহমাদ আল-শারা’ টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সুয়েদার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সুয়েদার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বেদুইন ও তাদের পরিবারের উপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী দেশটিতে বসবাসকারী তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা এপি’র খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দূত টম বারাক জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে শনিবার ভোরে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। যদিও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে সরাসরি এই চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি, তবে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্ট আল-শারা’ বেদুইনদের উদ্দেশে বলেন, দেশের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি তাদের যুদ্ধবিরতি মেনে চলার এবং সরকারের নির্দেশ মানার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা শেখ হিকমাত আল-হিজরি, যিনি বর্তমান সরকারের বিরোধী এবং পূর্বে ঘোষিত দুটি যুদ্ধবিরতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন, তিনি জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর তত্ত্বাবধানে একটি চুক্তির মাধ্যমে সুয়েদার উত্তেজনা কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে— সংঘর্ষ কমাতে এবং অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের জন্য প্রদেশের প্রশাসনিক সীমানার বাইরে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন, সীমান্ত গ্রামগুলোতে কোনো পক্ষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং সেখানে বসবাসকারী বেদুইন উপজাতিদের নিরাপদে বের হয়ে আসার সুযোগ দেওয়া।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট সুয়েদাকে সিরিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, সেখানকার দ্রুজ সম্প্রদায় সিরিয়ার জাতীয় কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তিনি সিরিয়ার সকল সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার অঙ্গীকার করেন।
একইসঙ্গে এই সংকটকালে সিরিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, আরব দেশ এবং তুরস্ককে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সিরিয়ায় বসবাস করে। এদের বাইরে লেবানন ও ইসরায়েলেও তাদের বসবাস রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত ১২ জুলাই থেকে সুয়েদা প্রদেশে ভারী গোলাবর্ষণ, স্নাইপার হামলা ও অপহরণের কারণে ৮৭,০০০ এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানকার স্কুল, গির্জা ও সরকারি ভবনগুলোতে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। সুয়েদার প্রধান হাসপাতালটি কর্মী ও জ্বালানির অভাবে মাত্র ১৫ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে।
এছাড়া, মানবিক সাহায্যকর্মীরাও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস