সিরিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ: মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, কি ঘটছে সেখানে?

দামাস্কাসের কাছে সংঘর্ষে নিহত অন্তত ১১ জন, সিরিয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত

সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের কাছে দ্রুজ-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবারের এই সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগের দিন, মঙ্গলবার, জারমানা শহরে হওয়া সংঘর্ষে নিহত হয় আরও ১০ জন। খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় কিভাবে?

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভুয়া অডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতার সূত্রপাত। ক্লিপটিতে একজন দ্রুজ ধর্মগুরুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়।

এই ঘটনার জেরে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা জারমানা শহরে হামলা চালায়। যদিও পরে জানা যায়, ক্লিপটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ধর্মগুরুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ:

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, সিরিয়ায় বসবাসকারী দ্রুজ সম্প্রদায়ের উপর কোনো ধরনের আঘাত তারা সহ্য করবে না। ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যেই দামাস্কাসের দক্ষিণে একটি “চরমপন্থী গোষ্ঠীর” উপর আঘাত হেনেছে, যারা দ্রুজদের উপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

দ্রুজ সম্প্রদায় ও সিরিয়া সরকারের মধ্যে সম্পর্ক:

সিরিয়ার এই অঞ্চলের দ্রুজ সম্প্রদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। মূলত সুওয়াইদা প্রদেশে এদের বসবাস।

বিদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুতির পর নতুন সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। দ্রুজ নেতারা তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, যা সিরিয়ার বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধের মূল কারণ।

নতুন সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন আহমদ আল-শারায়া, যিনি একসময় ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়েত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান ছিলেন। এই বিষয়টিও অনেকের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

আশঙ্কা ও প্রতিক্রিয়া:

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জারমানায় হামলার ঘটনার পর আশরাফিয়া সাহনায়াতেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। সুওয়াইদার সামরিক পরিষদের প্রধান তারেক আল-শৌফির অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুজ এবং সামরিক কাউন্সিলকে সেখানে সাহায্য করতে বাধা দিচ্ছে।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে এবং যারা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরিয়ার দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

বর্তমানে সিরিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। দেশটির সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে, তবে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

সব মিলিয়ে, দামাস্কাসের আশেপাশের সংঘর্ষ সিরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *