সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট। গত মাসে কয়েকশ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজের সুবিধার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মার্চ মাসের শুরুতে, সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বাশার আল-আসাদ একজন আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের লোক, এবং এই সংঘর্ষের জের ধরে প্রতিশোধমূলক হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
গত ৯ই মার্চ, প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নিহতদের বিষয়ে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির কাজ ছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ডিক্রিতে প্রেসিডেন্ট জানান, কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করতে আরও বেশি সময় চেয়েছে। তাই তাদের জন্য সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে, যা বাড়ানো হবে না।
মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস (এসএনএইচআর) তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে ৬ থেকে ১০ই মার্চের মধ্যে লাটাকিয়া, তার্তুস এবং হামা প্রদেশে সংঘটিত হামলায় অন্তত ৮০৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৯ জন শিশু ও ৪৯ জন নারীও ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৩রা এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, তার্তুস প্রদেশের উপকূলীয় শহর বানিয়াসে নিহত ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৩২ জনকে তাদের সম্প্রদায়ের কারণে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি আরও জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের লোকদের তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করত এবং তাদের হুমকি দিত বা হত্যা করত। কিছু ক্ষেত্রে, তাদের প্রাক্তন সরকারের করা ভুলের জন্য অভিযুক্ত করা হতো।
তবে, এই সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। লাটাকিয়া প্রদেশের আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী ফিরাস নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, সময় বাড়ানোটা আসলে “সময়ক্ষেপণ” করার একটি কৌশল। তিনি মনে করেন, কমিটির কাজ থেকে প্রকৃত জবাবদিহিতা আসবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
কমিটির মুখপাত্র ইয়াসির ফারহান শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ৪১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রতিটি স্থান একটি পৃথক মামলার ভিত্তি তৈরি করে এবং প্রমাণ সংগ্রহের জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, কিছু এলাকায় যাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি, তবে সেখানকার বাসিন্দারা বাশার আল-আসাদের অনুগতদের হুমকি সত্ত্বেও তদন্তে সহযোগিতা করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা