সিরিয়ায় বিভেদ: সংঘর্ষের পর দ্বিধাবিভক্ত দ্রুজ সম্প্রদায়!

সিরিয়ার ড্রুজ সম্প্রদায়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা: গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী অস্থিরতা

সিরিয়ায় দীর্ঘকাল ধরে চলা যুদ্ধের পর সেখানকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বরং বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা।

সম্প্রতি দেশটির ড্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যা নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায় দামেস্কের আশেপাশে এবং দক্ষিণাঞ্চলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস বেশি।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, গত কয়েক সপ্তাহে দামেস্কের কাছাকাছি জারামানা, আশরাফিয়াত সাহনায়া এবং সুয়েদা প্রদেশে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এই এলাকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস।

জানা গেছে, একটি বিতর্কিত অডিও রেকর্ডিংকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতার সূচনা হয়, যেখানে নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছিল। যদিও ওই রেকর্ডিংটি বিতর্কিত এবং এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে এর জের ধরে স্থানীয় ড্রুজ গোষ্ঠী এবং বহিরাগতদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

এই ঘটনার পর ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালায়। সিরিয়ার সরকার এটিকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইসরায়েল প্রায়ই সিরিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালায় এবং এই নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল সিরিয়ার দুর্বল সরকারকে আরও দুর্বল করতে চাইছে, যাতে তারা পুরো দেশের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।

ড্রুজ সম্প্রদায় বহু বছর ধরে সিরিয়ার বাথ পার্টির শাসনের অধীনে ছিল। বাথ পার্টির শাসনামলে তাদের নিজস্ব কোনো শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ড্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন দেখা যায়। কেউ কেউ বাশার আল- আসাদের সরকারের প্রতি সমর্থন জানালেও অনেকে এর বিরোধিতা করেন।

বর্তমানে, ড্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী, আবার অনেকে তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।

সুয়েদার কিছু বাসিন্দা তাদের এলাকার নিরাপত্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাইছে।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা তাদের প্রতিবেশীদের নিয়ে ভীত এবং তাদের মধ্যে প্রতিশোধের ভয় কাজ করছে।

কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, তারা নতুন সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করেছে।

সিরিয়ার এই পরিস্থিতি দেশটির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। ১৪ বছর ধরে চলা যুদ্ধের ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি।

সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের ভবিষ্যৎকে আরও কঠিন করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *