সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসানের পর উদ্বাস্তু মানুষজন যখন নিজ ভিটে-বাড়িতে ফিরছেন, তখন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়ংকর বিপদ— মাইন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর, গত কয়েক মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মাইন ও বিস্ফোরকের আঘাতে দুইশতের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাস্তুচ্যুত হয়ে ফিরে আসা প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের জীবন এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মাইন ও অবিস্ফোরিত বোমা।
যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলো যখন ফিরতে শুরু করেছে, তখনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিস্ফোরিত হচ্ছে মাইন, আর এতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
শিশুদের জন্য এই মাইনগুলো এক ভয়ংকর ফাঁদ। অনেক সময় তারা খেলনা ভেবে এগুলো নিয়ে খেলতে গিয়ে হতাহত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ‘হ্যালো ট্রাস্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে ৬৪০ জনের বেশি মানুষ মাইন বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স, যা ‘হোয়াইট হেলমেট’ নামেও পরিচিত, তাদের মাইন অপসারণ কর্মসূচির সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সামি আল মোhammed সতর্ক করে বলেছেন, “সিরিয়ার কোনো এলাকাকে এখনো মাইনমুক্ত বলা যাবে না।” তিনি আরও জানান, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও মাইন অপসারণ করতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর বাড়িঘর নিরাপদ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এদেরই একজন ছিলেন ফাহদ আল-ঘাজার।
তিনি একসময় সিরিয়ার সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করতেন, কিন্তু যুদ্ধের শুরুতে তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং বিরোধী দলে যোগ দেন। মাইন অপসারণের কাজ করতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি নিহত হন।
ফাহদের ভাই আব্দুলজাব্বার আল-ঘাজার জানান, ফাহদ প্রায়ই বলতেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন আমাদের প্রকৌশলীদের এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে এবং মাইন সরিয়ে তাদের বাড়ি ফিরতে সাহায্য করতে হবে।” ফাহদের মৃত্যুর আগে তোলা শেষ ছবিতে দেখা যায়, তিনি সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে একটি মাঠ থেকে মাইন সরানোর কাজ করছেন।
ফাহদ বিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর চার সন্তান ছিল। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে।