লেবানন ও সিরিয়ার সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, যা বর্তমানে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সিরিয়ার পক্ষ থেকে এই সংঘাতের জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যেখানে সিরিয়ার তিনজন সেনা সদস্য নিহত হয়। উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করতে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
সিরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সিরীয় সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর অবস্থানে গোলা বর্ষণ করেছে, যার ফলে সীমান্তে সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে সোমবারের সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংঘর্ষে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও জড়িত ছিল। তবে এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে।
লেবাননের গণমাধ্যম জানিয়েছে, একটি সিরীয় সামরিক গাড়িতে হামলার পর ভোরে সেখানে হালকা সংঘর্ষ হয়। এছাড়া, সোমবার সকালে লেবানন সীমান্ত থেকে ছোড়া একটি গোলার আঘাতে সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা চারজন সাংবাদিক সামান্য আহত হয়েছেন।
তাঁরা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন লেবানিজ গোষ্ঠী এই সংঘর্ষে জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে শনিবার সিরিয়ায় প্রবেশ করে তিনজন সেনা সদস্যকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ এনেছে। সম্প্রতি, সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনুগত সশস্ত্র লেবানিজ গোষ্ঠীর মধ্যে এই অঞ্চলে সহিংসতা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে, আল-আসাদ অনুগত এবং আল-আলাউয়েত সম্প্রদায়ের বেসামরিক লোকজনের ওপর ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। লেবাননের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই সেনা অপহরণের ঘটনার সঙ্গেও এই গোষ্ঠী জড়িত ছিল।
লেবানন ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। লেবাননের সামরিক বাহিনী নিহত তিন সেনার মরদেহ সিরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে।
সোমবার নতুন করে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, সীমান্তের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির কারণে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা সিরিয়ার হারমেল-এর দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন।
লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুর্গম এলাকা হওয়ায় অনেক জায়গায় এর কোনো সুস্পষ্ট বিভাজন নেই। হিজবুল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে আনা সেনা অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হিজবুল্লাহর শীর্ষস্থানীয় আইনপ্রণেতা হুসেইন হাজ হাসান লেবাননের আল জাদীদ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরীয় পক্ষ থেকে লেবাননের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সীমান্ত গ্রামগুলোতে হামলার অভিযোগ করেছেন।
লেবানন সরকার সিরিয়ার সঙ্গে তাদের উত্তরাঞ্চলীয় এবং পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এবং ইসরায়েলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে সেনা মোতায়েন করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছে, যাতে তারা সামরিক খাতে আরও বেশি অর্থ পেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর দুই যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা