সিরিয়ায় সংখ্যালঘু নিধনের ভয়ঙ্কর ভিডিও! আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব

সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চালানো নৃশংসতার অভিযোগ, তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের উপর চালানো নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে সিএনএন।

সংবাদ মাধ্যমটির অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৬ মার্চ বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর হামলায় নতুন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যোদ্ধারা হতাহত হয়। এর জের ধরে ৭ মার্চ দেশটির লাটাকিয়া প্রদেশের সানোবার গ্রামে আলাউয়ি সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্বিচারে হামলা চালানো হয়। হামলায় জড়িত সরকারি বাহিনীর সদস্যরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা করে, তাদের বাড়িঘর লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সকালে আত্নগোপনে থাকা এক মা ও মেয়ের ভিডিওতে তাদের আতঙ্কিত শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড হয়। ওইদিন সকালে খলিল পরিবারের কর্তা তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে তাদের কোনো ভয় নেই। তিনি বলেছিলেন, নতুন সরকারের সেনারা কেবল বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন লোকদের খুঁজছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিবারের কর্তা ও তার ছেলের লাশ বাড়ির উঠানে পাওয়া যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশ পরা এক যোদ্ধা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির আশেপাশে ঘুরছে এবং ‘জাতিগত নির্মূল, জাতিগত নির্মূল’ বলে চিৎকার করছে। তার ফেসবুক পেজে ২৮ হাজার অনুসারীর জন্য ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।

সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, সানোবার গ্রামে অন্তত ৮৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের দাবি, মৃতের সংখ্যা ২০০ জনের বেশি, যাদের বেশিরভাগই পুরুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, তাদের বাড়িঘর লুট করেছে এবং আগুন দিয়েছে।

আলাউয়িদের উপর হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা’র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, বিদ্রোহীদের সহিংসতা বন্ধ করতে তিনি কতটা সফল হবেন, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ৬ মার্চ আসাদ অনুগত সেনারা নতুন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর উপর হামলা চালায়। এর পরেই লাটাকিয়া ও তারতুস প্রদেশে প্রতিশোধমূলক হামলা হয়। সরকার এই ঘটনার জন্য সাবেক স্বৈরশাসকের অনুগত কিছু গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। প্রেসিডেন্ট আল-শারা এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছেন।

আলাউয়ি সম্প্রদায় শিয়া ইসলামের একটি শাখা এবং একসময় আসাদ পরিবারের শাসনকালে প্রভাবশালী ছিল। সিএনএন-এর পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, শারা’র সরকারের প্রতি অনুগত সুন্নি ইসলামপন্থী জঙ্গিরা আলাউয়িদের ‘জাতিগত নির্মূলের’ আহ্বান জানাচ্ছে।

সিএনএন সানোবার গ্রামের ঘটনার বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল।

সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস (এসএনএইচআর) জানিয়েছে, ওই হামলার পর ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার আগে সেনারা তাদের বাড়িঘরে প্রবেশ করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তারা গ্রাম থেকে চলে যায় এবং পরে আবার ফিরে এসে লুটপাট চালায়। পরে তারা পুরুষদের বাইরে বের করে আনে এবং গুলি করে হত্যা করে।

সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, হামলাকারী এক ব্যক্তির ছবি তার ফেসবুক প্রোফাইলের সাথে মিলে যায়। ভিডিওতে তাকে খলিল পরিবারের বাড়িতে দেখা গেছে। এছাড়া, নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয়ও শনাক্ত করা হয়েছে।

সিএনএন-এর যাচাই করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক মিলিট্যান্ট মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাকে হত্যা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর প্রায় তিন দিন ধরে সানোবার গ্রামের রাস্তায় মরদেহ পড়ে ছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহতদের গণকবর দেওয়া হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *