ধ্বংসস্তূপেও স্বস্তি! সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের ঘরে ফেরার গল্প

যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামগুলোতে ফিরছেন সিরীয়রা। দীর্ঘ সংঘাতের পর সিরিয়ার শরণার্থীরা ধীরে ধীরে তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রামগুলোতে ফিরতে শুরু করেছেন।

যদিও তাদের ঘরবাড়িগুলো যুদ্ধের কারণে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং মৌলিক পরিষেবাগুলোরও অভাব রয়েছে, তবুও তারা উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর পরিবর্তে নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার সিরীয় তাদের জন্মস্থানে ফিরে এসেছেন।

হামা প্রদেশের আল-হাওয়াশ গ্রামের বাসিন্দা ৭৩ বছর বয়সী আরেফ শামতান তাদেরই একজন। বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের পর তিনি তার ছেলের সঙ্গে গ্রামে ফিরে আসেন।

ফিরে এসে দেখেন তার বাড়িটির ছাদ নেই, দেয়ালগুলোও ফেটে গেছে। এমনকি গ্রামটিতে বিদ্যুৎ, পানি ও স্বাস্থ্যসেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।

কিন্তু, তুরস্ক সীমান্তের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে থাকার চেয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকাকেই তিনি শ্রেয় মনে করেন।

শিবিরে থাকার চেয়ে এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকাই ভালো। যদিও জীবন কঠিন, তবুও আমরা এখানে, আমাদের গ্রামে থাকতেই চাই।”

শামতান

২০১১ সালে সিরিয়া সংকট শুরুর পর শামতান তার পরিবার নিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন।

তিনি জানান, প্রায় দুই মাস আগে পরিবারের সদস্য ও শিশুদের নিয়ে তিনি উদ্বাস্তু শিবির ছেড়ে আসেন এবং নিজের জমিতে আবার চাষাবাদ শুরু করেছেন।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী আবদুল গাফুর আল-খতিবও যুদ্ধের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিনিও ২০১৯ সালে পরিবার নিয়ে সীমান্ত এলাকার একটি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি শুধু আমার বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। আমার গ্রামে থাকাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, শরণার্থীদের ফিরে আসার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর অনুপস্থিতি।

সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।

আল-খতিব জানান, “এখানে কোনো স্কুল নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই।”

২০১১ সালে সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বা বিদেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

বর্তমানে, ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়ে আছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *