সিরিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ: বদলে যেতে পারে পুরনো মিত্রতা!

সিরিয়ার পরিস্থিতি: গৃহযুদ্ধ পরবর্তী জোটগুলোতে পরিবর্তনের আভাস

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশটির সরকার, বিভিন্ন উপজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী ইসরায়েলের মধ্যে সৃষ্ট এই অস্থিরতা গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সমীকরণকে নতুন করে নাড়া দিতে পারে।

বাশার আল-আসাদের পতনের সাত মাস পর সেখানকার পরিস্থিতি এখনো বেশ উদ্বেগের।

গত সপ্তাহে, দক্ষিণ-পশ্চিমের সুয়াইদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া ও স্থানীয় সুন্নি মুসলিম বেদুঈন উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সরকারি বাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করতে হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু এর ফল হয় ভিন্ন।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি সেনারা সেখানকার দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এবং তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট ও ধ্বংস করে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে ইসরায়েল দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন জানায়। ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে বোমা হামলা চালায়।

এটি ছিল সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারার প্রতি একটি সতর্কবার্তা, যিনি একসময় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমানে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার পক্ষে কথা বলছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সুয়াইদাতে সরকারি বাহিনীর ওপরও হামলা চালায়।

অবশেষে, উভয় পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, যার ফলে দ্রুজ সম্প্রদায়ের মিলিশিয়ারা ও ধর্মীয় নেতারা সুয়াইদার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে বহাল থাকে, এবং সরকারি বাহিনী এলাকাটি ত্যাগ করে।

তবে, বেদুঈন ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এখনো চলছে। এর মধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম বারাক ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যেও আলাদা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সরকারের প্রতি ক্রমশ অনাস্থা বাড়ছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, তাদের অভিযোগ, নতুন সরকার তাদের অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে না।

সুয়াইদার ঘটনা তাদের মধ্যে ভীতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে মনে করেন, সরকার যদি দ্রুজদের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে ছাড় দেয়, তবে অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও একই ধরনের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানাতে পারে, যা সিরিয়ার অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চলছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে সেই আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের কারণে সিরিয়া স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিরিয়ার এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তুরস্ক সরকার কুর্দি মিলিশিয়াদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করে এবং তাদের প্রভাব কমাতে চায়।

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপ সম্ভবত সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে তুরস্কের দিকে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে পারে। এর ফলে, তুরস্কের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তবে পরিস্থিতি যে দ্রুত বদলাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *