সিরিয়ার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত, যুদ্ধের পর প্রথম গমের চালান।
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলা ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের পর অবশেষে সিরিয়ার অর্থনীতিতে পরিবর্তনের সুর। বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর এই প্রথম দেশটির ল্যাটাকিয়া বন্দরে পৌঁছেছে গমের একটি চালান। সিরিয়ার নতুন সরকার এটিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৬৬০০ মেট্রিক টন গম নিয়ে আসা জাহাজটি ল্যাটাকিয়া বন্দরে ভিড়েছে। যদিও জাহাজের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে একটি সূত্র জানাচ্ছে, গম এসেছে রাশিয়া থেকে। বাশার আল-আসাদের শাসনামলে রাশিয়া ও ইরান ছিল সিরিয়ার প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন সরকার খাদ্য নিরাপত্তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অথবা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন না হলেও, বাণিজ্য চুক্তির অর্থায়নে সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীরা সিরিয়ায় পণ্য বিক্রি করতে দ্বিধা বোধ করত।
সিরিয়ার সীমান্ত কর্তৃপক্ষ এই চালানকে ‘দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নতুন পর্বের সূচনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের মতে, এটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ আরও বাড়িয়ে দেবে। নতুন সরকার ১৪ বছরের সংঘাতের পর দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তারা দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে।
২০১১ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর সিরিয়ায় সহিংসতা শুরু হলে, অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা পুনরায় সেখানে তাদের পরিষেবা শুরু করেছে। সম্প্রতি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) উদ্দেশ্যে একটি সিরীয় যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়ন করে, যা দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলের পুনরায় সূচনার একটি বড় উদাহরণ।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার অপেক্ষা না করে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে এখনই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আরব রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক প্রধান আব্দুল্লাহ আল-দারদারি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে কোনো লাভ নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে “নাগরিকদের সরাসরি প্রভাবিত করে এমন প্রকল্প”, সুশীল সমাজের মাধ্যমে পরিষেবা প্রদান, বিশেষ করে শিক্ষা এবং সরকারি সেবার দ্রুত উন্নতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আল-দারদারির মতে, “মানুষকে দ্রুত উন্নতি অনুভব করতে হবে… বিশেষ করে এমন কঠিন সময়ে।” তিনি আরও বলেন, “একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকারের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ায় অর্থপ্রবাহ শুরু হবে।” যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ জানিয়েছে, নতুন কর্তৃপক্ষ মানবাধিকারের বিষয়ে কেমন পদক্ষেপ নেয়, তা দেখে তারা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা