যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় গম: অবশেষে কি শান্তি ফিরছে?

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় গম বোঝাই একটি জাহাজের আগমন ঘটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর এই ঘটনাটি ঘটল।

প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কবল থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটি। সিরিয়ার জন্য এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুনরায় প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২৮,৫০০ টন গম নিয়ে একটি জাহাজ সিরিয়ার টারটাস বন্দরে ভিড়েছে। ইইউ’র পক্ষ থেকে সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরেই এই ঘটনাটি ঘটল।

গত সপ্তাহে ইইউ’র পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এই বিষয়ে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। এর আগে, এই মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রও একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল।

দামাস্কাস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক মাহমুদ আবদেল ওয়াহেদ জানিয়েছেন, এই গম বোঝাই জাহাজের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে, সিরিয়ার জনগণ এবং সরকারের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এর মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়ার এবং বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয় হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ার অবকাঠামো এবং অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো এখন ইউরোপীয় আর্থিক বাজারে পুনরায় প্রবেশ করতে পারবে।

ইইউ’র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাইয়া কাল্লাস এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সিরিয়ার জনগণের “নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ সিরিয়া” পুনর্গঠনে ইউরোপের “প্রতিশ্রুতি” পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

কাল্লাস আরও বলেন, “সিরিয়ার পুনরুদ্ধার এবং সিরিয়ার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তার জন্য এই সিদ্ধান্তটি সঠিক সময়ে নেওয়া হয়েছে।”

উল্লেখ্য, এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। বিদ্রোহীদের এক হামলায় তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।

এরপর আহমাদ আল-শারা’র নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সময়কার নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়া কার্যত বিশ্ব বাণিজ্য ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যা দেশটির পণ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করে।

যদিও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে, তবে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রাক্তন আসাদ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আগামী ১ জুন, ২০২৬ পর্যন্ত বহাল রেখেছে।

এছাড়াও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আরও দুইজন ব্যক্তি এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সিরিয়ার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *