রমজানে উদ্বাস্তু জীবন: ইথিওপিয়ায় সিরীয়দের ভালোবাসার ইফতার!

রমজানে ভালোবাসার মাস, ইথিওপিয়ায় উদ্বাস্তু সিরীয়দের ইফতারের আয়োজন

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে জীবন বাঁচাতে যারা পালিয়ে এসেছেন, তাদের অনেকেই এখন ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবাতে নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। এখানকার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রমজান মাসজুড়ে এখনো সেই পুরনো ঐতিহ্য, ইফতারের আয়োজন চোখে পড়ে।

খাবারের মাধ্যমে তারা তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, যা তাদের উদ্বাস্তু জীবনের কষ্টের মধ্যেও শান্তি এনে দেয়।

২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, প্রায় ৫৫ লাখ সিরীয় তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এদের মধ্যে অনেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিলেও, কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ইথিওপিয়ায়।

এখানকার সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের অনেক কাঠখোর পোড়াতে হয়েছে।

আদ্দিস আবাবার বোলে মাইকেল এলাকাটি এখন সিরীয়দের একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে অনেক সিরীয় তাদের ব্যবসা শুরু করেছেন, যার মধ্যে রেস্টুরেন্ট অন্যতম।

আহমেদ ইব্রাহিম নামের একজন সিরীয়, যিনি ২০২০ সালে ইথিওপিয়ায় আসেন, তিনি বলেন, “আমি যখন এখানে আসি, আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। পরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে নিজের ব্যবসা শুরু করি।

এখন আমি একজন ইথিওপীয় নারীকে বিয়ে করেছি এবং আমার দুটি মেয়ে আছে। এই দেশটা এখন আমার ঘর।

আহমেদের রেস্টুরেন্ট ‘সিরিয়া’ রমজান মাসে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে।

তিনি বলেন, “আমি চাইতাম সিরিয়ার মতো এখানেও সবাই মিলেমিশে ইফতার করতে পারুক, কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে সেটা কঠিন। তাই আমরা চেষ্টা করি, যারা আমাদের কাছে আসে, তাদের যেন খালি হাতে ফিরিয়ে না দেই।

বোলে মাইকেলের রাস্তায়, সিরীয়দের তৈরি করা খাবার, যেমন – হুমায়ুস এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি হয়। এখানে বসবাসকারী অন্য দেশের উদ্বাস্তুদের মাঝেও এই সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আরেকজন সিরীয় নারী, যায়নাব মোহাম্মেদ, যিনি সুদানের গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে গত বছর ইথিওপিয়ায় এসেছেন, তিনি বলেন, “এখানে জীবন সহজ নয়, তবে এই ধরনের আয়োজন আমাকে বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়।

এখানকার মানুষজন খুবই উদার, যা আমাদের সিরিয়ার সংস্কৃতি থেকে পাওয়া।

আরেকজন সিরীয়, আয়শা আব্দুল, যিনি সুদানের সীমান্ত পার হয়ে এখানে এসেছেন, তিনি জানান, এখানে জীবন কঠিন হলেও এখানকার মানুষজন খুবই ভালো।

তিনি বলেন, “এখানে কোনো সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না, চাকরি খুঁজে পাওয়াও কঠিন। তাই অনেককে টিকে থাকার জন্য কঠিন কাজ করতে হয়।

বেথেল এলাকার একটি জনপ্রিয় সিরীয় রেস্টুরেন্ট ‘সিরিয়ানা’। এখানেও রমজান মাস উপলক্ষে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়।

রেস্টুরেন্টের মালিক আহমেদ আব্দুলকাদির বলেন, “আমরা চেষ্টা করি ভালো নাগরিক হিসেবে সমাজের জন্য কিছু করতে।

এই উদ্বাস্তুদের জীবন যুদ্ধের কারণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও, তারা তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা ও ইগাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *