ভূমধ্যসাগরের বুকে এক টুকরো ইতিহাস: স্পেনের ছোট্ট দ্বীপ, যেখানে পর্যটনের ভিড়েও টিকে আছে ঐতিহ্য।
স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ যেন এক স্বপ্নের ঠিকানা। বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জের কথা উঠলেই চোখে ভাসে সাদা পাথরের শহর, নীল সমুদ্রের ঢেউ আর প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
পর্যটকদের আনাগোনা এখানে বছর জুড়েই লেগে থাকে, বিশেষ করে মায়োর্কা, মেনোকা, ইবিজা এবং ফোরমেন্টেরার মতো দ্বীপগুলোতে। তবে, স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আরও একটি দ্বীপ রয়েছে, যা এইসব দ্বীপের মতোই সুন্দর, কিন্তু এখনো অনেকের কাছেই অজানা।
আলিকান্তের উপকূল থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত নুয়েভা টাবার্কা নামের এই দ্বীপটি। এক মাইলেরও কম দীর্ঘ, আর প্রস্থে ৪00 মিটারের মতো।
সারা বছর এখানে মাত্র ৫০ জন মানুষের বসবাস, যা এটিকে স্পেনের সবচেয়ে কম জনবসতির দ্বীপে পরিণত করেছে। আকারে ছোট হলেও, নুয়েভা টাবার্কার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশাল। পর্যটকদের আনাগোনা এখানে বেশ ভালোই, তবে কোস্টা ব্লাঙ্কার মতো এখানে এখনো পর্যন্ত অতিরিক্ত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
এই দ্বীপের মানুষের শিকড় আসলে ইতালির কাছাকাছি নয়, বরং কয়েকশো মাইল দূরে তিউনিসিয়ার উপকূলে। অষ্টাদশ শতকে এখানকার অধিবাসীরা এক কঠিন পরিস্থিতির শিকার হন।
১৭৪১ সালে তিউনিসিয়ার শাসক তাদের বন্দী করেন। পরে, স্পেনের রাজা এবং সার্ডিনিয়ার রাজা তাঁদের আশ্রয় দেন। যারা স্পেনে ফিরে এসেছিলেন, তাঁদের নতুন জীবন শুরু করার জন্য নুয়েভা টাবার্কা দ্বীপটি বেছে নেওয়া হয়। পুরনো বসতির স্মৃতিস্বরূপ এর নামকরণ করা হয় নুয়েভা টাবার্কা, যার অর্থ ‘নতুন টাবার্কা’।
দ্বীপটিতে পুরোনো দিনের স্থাপত্যশৈলী এখনো বিদ্যমান। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, বর্গাকারে সজ্জিত ঘরবাড়ি— সবকিছুই যেন সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এখানে একটি দুর্গও তৈরি করা হয়েছিল।
বর্তমানে নুয়েভা টাবার্কা তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার পুরনো বাড়িগুলো সংস্কার করে পর্যটকদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানকার রেস্তোরাঁ এবং দোকানগুলোতেও পর্যটকদের আনাগোনা বেশ ভালোই থাকে।
পর্যটকদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই বিদেশি। তবে শীতকালে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
পর্যটনের এই ভিড়েও নুয়েভা টাবার্কা তার নিজস্বতা ধরে রেখেছে। দ্বীপের বাসিন্দারা চান, পর্যটনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে যেন দ্বীপের ঐতিহ্য এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়।
দ্বীপের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নুয়েভা টাবার্কা যেন প্রকৃতির এক নীরব সাক্ষী। পর্যটকদের আনাগোনা এখানে অনেক, কিন্তু দ্বীপটি এখনো তার শান্ত ও স্নিগ্ধ রূপ ধরে রেখেছে। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এটি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন