তাইওয়ানের জলসীমার কাছে সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে প্রথমবারের মতো এক চীনা জাহাজ ক্যাপ্টেনকে অভিযুক্ত করেছে তাইওয়ানের কৌঁসুলিরা। ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যা তাইওয়ানের কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এমন ঘটনা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, চীনের পতাকাবাহী ‘হং তাই ৫৮’ নামের একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন অভিযুক্ত ওয়াং (ছদ্মনাম)। এই জাহাজটি টোগোতে নিবন্ধিত। তাইওয়ানের কর্মকর্তারা জানান, জাহাজটি তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের কাছে একটি সাবমেরিন ক্যাবলের কাছে নোঙর ফেলেছিল, যার ফলে ক্যাবলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাইওয়ানের তাইনান শহরের কৌঁসুলিরা জানান, ক্যাপ্টেন ওয়াং-এর বিরুদ্ধে ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও ক্যাপ্টেন ওয়াং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন, তবে তিনি জাহাজের মালিকানা সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। কৌঁসুলিরা আরও জানিয়েছেন, ঘটনার সময় আটক হওয়া অন্য সাতজন চীনা নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তাদের চীনে ফেরত পাঠানো হবে।
এই ঘটনার পর, তাইওয়ানের ডিজিটাল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এর আগে, ২০২৩ ও ২০২২ সালেও এমন তিনটি করে ঘটনা ঘটেছিল।
তাইওয়ানের কোস্টগার্ড সম্প্রতি সমুদ্রের তলদেশে থাকা ক্যাবলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তারা চীন সংশ্লিষ্ট প্রায় একশ’ জাহাজের একটি ‘কালো তালিকা’ তৈরি করেছে এবং তাদের উপর নজরদারি চালাচ্ছে। তাইওয়ানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন প্রায়ই তাইওয়ানের আশেপাশে ‘ধূসর অঞ্চলের কার্যক্রম’-এর মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে থাকে।
এর মধ্যে বেলুন ওড়ানো এবং বালু উত্তোলনের মতো ঘটনাও রয়েছে।
জানুয়ারিতে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা সন্দেহ করছে যে চীন-সংশ্লিষ্ট একটি জাহাজ তাদের উত্তর উপকূলের কাছে একটি সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যদিও জাহাজের মালিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তাইওয়ান মনে করে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বাল্টিক সাগরে সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তাদের এখানে ঘটা ঘটনার মিল রয়েছে।
তাইওয়ানের সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা মনে করে, এই ধরনের ঘটনা তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সাবমেরিন ক্যাবলগুলি তাইওয়ানের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান