রাষ্ট্রপতির অফিসের নিরাপত্তা ভেঙে চীনে তথ্য পাচার, তাইওয়ানে চাঞ্চল্য!

(Internal Note: Source URL: The Guardian)

চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাইওয়ানে চার সেনাসদস্যকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দলের সদস্য ছিলেন।

তাইপে জেলার আদালত বুধবার এই রায় ঘোষণা করে। খবর অনুযায়ী, চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এই চারজনকে পাঁচ বছর দশ মাস থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত সেনারা ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে চীনের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গোপন সামরিক তথ্য পাচার করেছেন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন।

জানা যায় অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের নিরাপত্তা ইউনিটের এবং একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের সদস্য ছিলেন।

তদন্ত শুরুর আগে গত বছর আগস্টে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে খবর পৌঁছানোর পর তিনজন সেনাসদস্যকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্যজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্তরা মোবাইল ফোনে ছবি তুলে তথ্য পাচারের বিনিময়ে প্রায় ২৬০,০০০ থেকে ৬৬০,০০০ তাইওয়ানি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯ লাখ থেকে ২২ লাখ টাকার সমান) গ্রহণ করেছেন। টাকার অংকটি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে।

আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই সেনারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করতেন। তারা ঘুষ গ্রহণ করে এবং ছবি তোলার মাধ্যমে গোপন তথ্য চুরি করে তাদের দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন। তাদের এই কাজ দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ানে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে। সামরিক ও বেসামরিক তদন্ত সংস্থাগুলো অনুপ্রবেশ ও গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে।

অভিযুক্তদের অনেকেই তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, যাদের বেইজিং বা তার এজেন্টরা প্রলুব্ধ করেছে।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে এবং দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও বাতিল করেনি।

তাইওয়ান সরকার চীনের এই পদক্ষেপের মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে সম্প্রতি চীনকে ‘বৈরী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন।

এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জড়িত গুপ্তচরবৃত্তির মামলাগুলো শোনার জন্য সামরিক আদালত পুনর্বহাল করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

গত সপ্তাহে তাইওয়ানের সরকার দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্মীদের মূল বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, গুপ্তচরবৃত্তির এই ঘটনা তাইওয়ানের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ দেশটি চীনের সম্ভাব্য আক্রমণের হুমকির সম্মুখীন।

তাইওয়ানের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮ এবং ২০২২ সালে ১০।

২০১৭ সালে তাইওয়ানের সরকার অনুমান করেছিল, সেখানে চীনের হয়ে কাজ করা ৫,০০০ এর বেশি গুপ্তচর সক্রিয় ছিল।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *