আতঙ্ক! তাইওয়ানের হাতে এলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র!

তাইওয়ান: চীনের সম্ভাব্য সামরিক হুমকির মুখে নিজেদের সুরক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে তাইওয়ান।

চীনের সম্ভাব্য সামরিক হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ক্রমশ তৎপর হচ্ছে তাইওয়ান। এর অংশ হিসেবে, তাইওয়ান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম সংস্করণ উন্মোচন করেছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তাইওয়ানেই তৈরি করা হবে।

তাইওয়ানের শীর্ষ অস্ত্র প্রস্তুতকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল চুং-শান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসআইটি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি আন্ডুরিল ইন্ডাস্ট্রিজের যৌথ উদ্যোগে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী শুরুর আগে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়। এটিকে স্বল্প খরচে তৈরি করা স্বয়ংক্রিয় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করা হয় এবং প্রয়োজন হলে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে তাইওয়ানের উপর সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে।

নিয়মিতভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমান ও নৌবহর পাঠানো হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাইওয়ানের অবস্থানকে দুর্বল করার চেষ্টা বলেই মনে করা হয়।

চীনের এই হুমকির প্রেক্ষাপটে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

আন্ডুরিলের তৈরি করা ‘বারাকুডা-৫০০’ ক্ষেপণাস্ত্রের ধারণার ওপর ভিত্তি করে নতুন এই ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে, যা সমুদ্র এবং স্থল উভয় স্থানেই আঘাত হানতে সক্ষম।

তবে এনসিএসআইটি ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি।

এনসিএসআইটি’র প্রেসিডেন্ট লি শিহ-চিয়াং বুধবার সাংবাদিকদের জানান, আগামী দেড় বছরের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে রাখা হবে।

তিনি আরও বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ শৃঙ্খলের সব উপাদান তাইওয়ানেই তৈরি করা হবে।

ভবিষ্যতের সব ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

এছাড়াও, এনসিএসআইটি আন্ডুরিলের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করতে যাওয়া একটি ডুবোজাহাজ ও স্বয়ংক্রিয় মাইন-এর একটি মডেলও প্রদর্শন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক মিত্র ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী দেশ হিসেবে পরিচিত।

ওয়াশিংটন তাইওয়ানকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।

তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন সরবরাহ কিছুটা কমেছে।

প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে এনসিএসআইটি আরও ছয়টি মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানির সঙ্গে দুটি চুক্তি এবং ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে বলে জানা গেছে।

গত মাসে তাইওয়ান সফরে এসে আন্ডুরিলের প্রতিষ্ঠাতা, পামার লাকি তাইওয়ানের উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, “তাইওয়ান প্রতিরক্ষা খাতে এক নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে, যা তাদের শিল্প ও ইলেকট্রনিক্সের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

এটি তাইওয়ানকে বিশ্বের কাছে ঈর্ষণীয় করে তুলেছে।”

অন্যদিকে, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে তাইওয়ানের বিষয়ে ‘বহিরাগত সামরিক হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, “আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতা অর্জনের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না এবং যে কোনো বহিরাগত সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছি।”

ডং জুন ‘শীতল যুদ্ধের মানসিকতা, আধিপত্যবাদ ও সংরক্ষণবাদের’ নিন্দা করেন এবং দেশগুলোকে ‘গুণ্ডামি’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পিট হেগসেথের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপে ডং জুন তাইওয়ান ইস্যু উত্থাপন করেন এবং সতর্ক করে বলেন, চীনকে প্রতিহত করতে তাইওয়ানকে ব্যবহার করার যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *