আতঙ্কের ছবি! সম্মতি ছাড়া ছবি ছড়ানো বন্ধে আইন, কি হবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন আইন পাশ হয়েছে, যা অনলাইনে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিওর অপব্যবহার রোধ করতে চাইছে। ‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ নামের এই আইনটি সম্প্রতি কংগ্রেসের উভয় কক্ষে বিপুল ভোটে সমর্থন লাভ করেছে এবং এখন এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।

এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল, কারো অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও, বিশেষ করে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ‘ডিপফেক’ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি নকল ছবি) প্রকাশ করা হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

আইনটি মূলত সিনেটর টেড ক্রুজ এবং সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচারের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত হয়েছে। তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও।

এই আইনের প্রধান দিকগুলো হলো: কারো অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা বা প্রকাশের হুমকি দেওয়া একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম এবং ওয়েবসাইটগুলোকে ছবি বা ভিডিও আপলোডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা সরিয়ে ফেলতে হবে, যদি ভুক্তভোগী সেই বিষয়ে অভিযোগ করেন।

আইনটির পক্ষে সমর্থনকারীদের মধ্যে রয়েছেন মেটা (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম)-এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও।

তাদের মতে, এই ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা হলে তা ভুক্তভোগীর জন্য খুবই কষ্টকর হতে পারে।

এছাড়াও, তথ্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ফাউন্ডেশন (Information Technology and Innovation Foundation) মনে করে, এই আইন ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করবে।

তবে, এই আইনের কিছু দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

তাদের মতে, আইনের সংজ্ঞাগুলো খুব বিস্তৃত হওয়ায় এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।

বিশেষ করে, সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এর মাধ্যমে বৈধ ছবিও সেন্সর করা হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি বা এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির (LGBTQ community) সদস্যদের ছবিও এই আইনের আওতায় আসতে পারে।

এমনকী, সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, যদি কোনো ঘটনার ছবি তোলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে।

আইনটি নিয়ে সমালোচকদের মূল আপত্তি হলো, এটি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছবি সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা অনেক সময় ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য যথেষ্ট নয়।

ছোট আকারের ওয়েবসাইটগুলোর পক্ষে এত দ্রুত কাজ করা কঠিন হতে পারে।

তারা হয়তো ঝুঁকি এড়াতে ছবি সরিয়ে ফেলতেই বেশি আগ্রহী হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে অনলাইনে ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে হয়রানির ঘটনা বাড়ছে।

‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ সেই দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং এর সম্ভাব্য অপব্যবহার রোধ করাটাও জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *