৯৭%-এর বেশি ভোট! তানজানিয়ার নির্বাচনে হাসসানের জয়, স্তম্ভিত বিশ্ব

তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্ক, ৯৭ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হাসসান।

দোদোমা, তানজানিয়া – তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসসান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৭ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। সরকারি ফলাফলে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে।

নির্বাচনে হাসসানের এই বিশাল জয় আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয় নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, না হয় তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে ছোট দলের আরও ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

গত ২৯শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের সময় সহিংসতা দেখা যায়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার প্রতিবাদে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের দমনে সামরিক বাহিনীকেও সহায়তা করতে দেখা গেছে। দেশটির ইন্টারনেট সংযোগেও সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

বিক্ষোভ তানজানিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার।

রাজধানী দারুস সালামে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং সন্দেহভাজনদের পরিচয় যাচাই করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র সেইফ মাঙ্গো জেনেভায় এক ভিডিও কনফারেন্সে জানান, দারুস সালাম, শিনিয়াঙ্গা এবং মোরোগোরো শহরে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তানজানিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিক্ষোভ দমনের কড়া সমালোচনা করেন। তারা হতাহতের সংখ্যা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিরোধী দল চাদেমা’র নেতা তুণ্ডু লিসুকে নির্বাচনে সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার কারণে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য ছিল।

এছাড়া, এসিটি-ওয়াজালেন্ডো দলের লুহাগা ম্পিনাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাসীন দল চামা চা মাপিনডুজির (সিসিএম) জন্য এই নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দলটির দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিল বিরোধী দলগুলো।

তবে তানজানিয়ার এই নির্বাচনের ফল আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যতিক্রমী। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের মতো কিছু নেতা ছাড়া এত বিশাল ব্যবধানে জয়ের ঘটনা খুব কমই দেখা যায়।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নির্বাচনের আগে তানজানিয়ায় গুম, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মানুষকে গুম করার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।

আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠী তাদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, প্রেসিডেন্ট হাসসান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালিয়েছেন।

সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) বন্ধ করা এবং জামিইফোরামস-এর মতো প্ল্যাটফর্মের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে ভীতি প্রদর্শন ও গ্রেপ্তারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তানজানিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৯২ সালে বহুদলীয় রাজনীতির সূচনার পর থেকে এক ভিন্ন চিত্র তৈরি করেছে।

অতীতে ক্ষমতাসীন দলগুলো বিরোধী দলের প্রতি কিছুটা সহনশীলতা দেখালেও, হাসসানের আমলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, তানজানিয়া দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। সেখানকার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।

দেশটির গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে দলটির ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *