মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: রাজি না হলে পাল্টা ব্যবস্থা!

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?

যুক্তরাষ্ট্র যদি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে খুব শীঘ্রই শুল্কের হার ‘আদান-প্রদান’ নীতিতে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই ইঙ্গিত দেন। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে এই ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন, যা তিনি ‘মুক্তির দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তবে পরে এই শুল্কগুলি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয় এবং শুল্কের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু এখন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন না হলে, সেই হার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বেসেন্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রায় ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তবে ঠিক কত দ্রুত শুল্কের হার ‘আদান-প্রদান’ পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও যোগ করেন, ছোট আকারের অনেক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্রুত একটি সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এছাড়া, মধ্য আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের জন্য আলাদা শুল্কের হার নির্ধারণের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে, গত সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনের একটি সাময়িক সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। ওই বৈঠকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের এই উত্থান-পতন ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা, যারা আমদানি করা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, যা ভোক্তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট মনে করেন, এই ধরনের ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তা’ দর কষাকষির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই উপকৃত হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তার প্রভাব পড়বে স্থানীয় বাজারে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বেশ সুদৃঢ়। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির যেকোনো পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *