শুল্কের চেক: শুনে ভালো লাগলেও বিপদ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব: মুদ্রাস্ফীতি বাড়ানোর আশঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে দেশটির সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, সরকারের পক্ষ থেকে করদাতাদের কিছু অর্থ ফেরত দেওয়ার একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই আলোচনা বর্তমানে বেশ জোরেশোরে চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক থেকে এই রাজস্ব আসে। এই শুল্কগুলি মূলত মার্কিন উত্পাদন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এবং জাতীয় ঋণের বোঝা কমাতে তৈরি করা হয়েছিল। তবে, এখন শুল্ক থেকে প্রাপ্ত অর্থ নাগরিকদের মধ্যে বিতরণের কথা ভাবা হচ্ছে।

এই প্রস্তাবের মূল কারণ হলো জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ। এমন পরিস্থিতিতে, সরকার যদি নাগরিকদের সরাসরি কিছু অর্থ ফেরত দেয়, তাহলে তা ভোটারদের কাছে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই প্রসঙ্গে, মার্কিন সিনেটর জশ হাওলি একটি বিল উত্থাপন করেছেন। এই ‘আমেরিকান ওয়ার্কার রিবেট অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ব্যবহার করে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক এবং নির্ভরশীল সন্তানের জন্য কমপক্ষে ৬০০ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে প্রায় ৬৬,০০০ বাংলাদেশী টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

একটি পরিবার, যেখানে মা-বাবা এবং দুটি সন্তান রয়েছে, তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ২,৪০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৬৪,০০০ বাংলাদেশী টাকা) পাওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

তবে, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম ইতিমধ্যেই বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, নাগরিকদের হাতে সরাসরি অর্থ আসলে তারা আরও বেশি জিনিস কিনবে, যা বাজারে চাহিদার চাপ বাড়িয়ে দেবে।

ফলে, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার সরাসরি নাগরিকদের অর্থ দিয়েছে। যেমন, কোভিড-১৯ মহামারী, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা এবং ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পরে এমনটা দেখা গেছে।

তবে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সেই ধরনের জরুরি অবস্থা নেই। যদিও কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক বাজারের দুর্বলতা এবং মন্দার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, তবে বেকারত্বের হার এখনো তুলনামূলকভাবে কম।

অর্থনীতিবিদ ডেভিড কেলি মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের হাতে বেশি অর্থ দেওয়া অনেকটা ‘পালং শাক খাওয়ার আগে ডেজার্ট খাওয়ার’ মতো। কারণ, বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে।

যদি ভোক্তাদের হাতে বেশি অর্থ থাকে, তাহলে তারা আরও বেশি খরচ করবে, যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে শুল্ক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৩০ বিলিয়ন টাকা) রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২৪২% বেশি।

এপ্রিল মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২২ ট্রিলিয়ন টাকা) শুল্ক রাজস্ব হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি।

তবে, শুল্কের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দেওয়ার এই পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি ভোটারদের প্রভাবিত করার একটি কৌশল। আবার কেউ মনে করেন, এটি দেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

কারণ, শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারের সাধারণ তহবিলে জমা হয়, যা বিভিন্ন বিল পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে ভোক্তাদের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই, শুল্কের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দেওয়ার এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *