বাড়ির স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্ন? নির্মাণ সামগ্রীর ওপর শুল্ক বাড়ায় মাথায় হাত!

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি: নতুন বাড়ি ও সংস্কারের খরচ বাড়ার আশঙ্কা। বিশ্ব অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো বাণিজ্য।

বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবার আমদানি-রপ্তানি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসায় দেশটির নির্মাণখাতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।

নতুন বাড়ি তৈরি এবং পুরাতন বাড়ির সংস্কারের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কানাডা, মেক্সিকো এবং চীন থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে কাঠ, নির্মাণ সামগ্রী, এবং গৃহস্থালীর সরঞ্জাম। এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে নতুন বাড়ি তৈরি করতে বা বিদ্যমান বাড়ির সংস্কার করতে খরচ বাড়ছে।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হোম বিল্ডার্স (National Association of Home Builders) -এর মতে, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাধারণ বাড়ির নির্মাণ খরচ ৭,৫০০ থেকে ১০,০০০ ডলার (প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ১১ লক্ষ টাকার বেশি) পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এই বর্ধিত খরচ সাধারণত ক্রেতাদের উপর চাপানো হয়, যার ফলে বাড়ির চাহিদা কমে যেতে পারে। কারণ, অনেক নির্মাতা বর্তমানে বিক্রি বাড়ানোর জন্য ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাণিজ্য শুল্কের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম এরই মধ্যে বাড়ছে। কাঠের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নির্মাণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তারা হয় দাম বাড়াবেন, নয়তো বাড়ির আকার ছোট করতে বাধ্য হবেন।

শুল্ক বৃদ্ধির এই সময়ে, নির্মাণ ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কাঠের সরবরাহ। কাঠের বাজারের অস্থিরতা তাদের ব্যবসার পরিকল্পনাকে কঠিন করে তুলেছে।

অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, তারা এই পরিস্থিতিতে কতটা সময় টিকে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে চিন্তিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য শুল্কের এই নীতি নির্মাণখাত এবং গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর বাজারের জন্য খুব খারাপ সময়ে এসেছে।

কারণ, সাধারণত বছরের এই সময়ে বাড়ির বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন।

তবে, শুধু নির্মাণখাতে নয়, বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন গৃহস্থালীর বিভিন্ন সরঞ্জামের দামেও প্রভাব ফেলবে। ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ চীন ও মেক্সিকো থেকে আসে।

ফলে, শুল্ক বাড়লে এইসব পণ্যের দামও বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুল্কের এই নীতি ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।

এর ফলে, নতুন বাড়ির বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা যদি দাম কত হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে না পারেন, তাহলে পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির প্রভাব শুধু দেশটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর একটা প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ে, তবে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও অনুভূত হতে পারে।

কারণ, অনেক ক্ষেত্রে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল। তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *