বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী স্যার এলটন জন এবং ম্যাডোনা’র দীর্ঘদিনের বিবাদ অবশেষে মিটে গেছে। সম্প্রতি, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অপ্রত্যাশিতভাবে ম্যাডোনা’র উপস্থিতির পরেই দু’জনের মধ্যেকার সম্পর্কের বরফ গলেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন সেলিব্রিটিরা প্রায়ই প্রকাশ্যে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন? এর পেছনের কারণগুলো কী, এবং এতে জনসাধারণের আগ্রহই বা কতটুকু?
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় কয়েক দশক আগে, যখন এলটন জন এবং ম্যাডোনা’র মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। এলটন জন বিভিন্ন সময়ে ম্যাডোনাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন।
একবার তিনি সরাসরি বলেছিলেন, “ম্যাডোনা, সেরা লাইভ শিল্পী, ফাক অফ! কবে থেকে ঠোঁট নাড়িয়ে গান করা লাইভ পারফরম্যান্স হলো?” এমনকি, ২০১২ সালের সুপারবোল হাফটাইম শোতে ম্যাডোনার পারফর্ম্যান্সের আগে এলটন জন পরামর্শ দিয়েছিলেন, “নিশ্চিত করুন, ভালো করে ঠোঁট মেলাবেন।
তবে, সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলেছে। ম্যাডোনা এবং এলটন জন দু’জনেই তাদের পুরনো তিক্ততা ভুলে গিয়েছেন। ম্যাডোনা’র একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেখা যায়, এলটন জনের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল এবং তিনি প্রকাশ্যে তাঁর অপছন্দকে কষ্ট পেয়েছেন।
এলটন জন ক্ষমা চেয়েছেন এবং দু’জনের মধ্যেকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে।
কিন্তু এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটে? মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর পেছনে গভীর কারণ থাকতে পারে। মানুষের মধ্যেকার এই ধরনের বিবাদ সম্ভবত অনেক পুরোনো কোনো ঘটনার বহিঃপ্রকাশ।
খ্যাতির শিখরে থাকা ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হন। অনেক সময়, ব্যক্তিগত ঈর্ষা বা অতীতের কোনো আঘাতও এর কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, খ্যাতি লাভের জন্য, অথবা মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যেও অনেকে এই ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
অন্যদিকে, জনসাধারণের মধ্যে সেলিব্রিটিদের এই ধরনের ঝগড়া উপভোগ করার প্রবণতাও দেখা যায়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এটি এক ধরনের “শ্যাডেনফ্রয়েড”, অর্থাৎ অন্যের ক্ষতিতে আনন্দ পাওয়ার মানসিকতা থেকে আসে।
মানুষেরা এর মাধ্যমে তাদের ভেতরের অনেক লুকানো অনুভূতিকে, বিশেষ করে অন্যদের দুর্বলতা দেখে নিজেদের দুর্বলতা থেকে মুক্তি খুঁজে পায়।
শুধু সঙ্গীত জগতে নয়, খেলা, চলচ্চিত্র এবং সাহিত্য জগতেও এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ওসিস’-এর দুই ভাই, নোয়েল এবং লিয়াম গ্যালাঘেরের মধ্যেকার বিবাদ ছিল বেশ আলোচিত।
একইভাবে, টেইলর সুইফট এবং কেটি পেরি’র মধ্যকার বিরোধও মিডিয়াতে বেশ চর্চিত হয়েছিল।
তবে, এই ধরনের বিবাদের চূড়ান্ত পরিণতি কী? কিছু ক্ষেত্রে, সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। আবার, অনেক সময়, তিক্ততা থেকেই যায়, যা সম্ভবত কারো সঙ্গেই আর ভালো সম্পর্ক রাখে না।
এলটন জন এবং ম্যাডোনার পুনর্মিলন সম্ভবত সেই সব বিতর্কের অবসান ঘটানোর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান