শিরোনাম: লন্ডনের যুবকদের গভীর ভয়: একটি আলোকচিত্রের গল্প
পৃথিবীর নানা প্রান্তে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে, উদ্বেগ আর ভয়ের একটা অদৃশ্য জাল বিস্তার করে আছে। এই ভয়গুলো কখনো ব্যক্তিগত, কখনো সামাজিক, আবার কখনও ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে আসে।
সম্প্রতি, লন্ডনের কিছু তরুণের কথা শোনা গেল, যারা তাদের সবচেয়ে গভীর ভয়গুলো নিয়ে মুখ খুলেছে—একটি আলোকচিত্র প্রকল্পের মাধ্যমে। তাদের সেই কথাগুলো যেন এক একটি প্রতিচ্ছবি, যা আমাদের সমাজেরই অংশ।
২০১৬ সালে উত্তর লন্ডনের আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবে সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের পরামর্শ দেওয়ার সময়, লেখক সেখানকার যুবকদের মাঝে ছুরি দ্বারা আঘাত ও আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষ্য করেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয় ‘ইয়ং মেন, ওরস্ট ফিয়ার্স’ (Young Men, Worst Fears) নামের এই প্রকল্প।
এর মাধ্যমে তরুণরা তাদের শৈশব, পিতৃহীনতা, দারিদ্র্য, গ্যাং সংস্কৃতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের কথা জানায়। তাদের উদ্বেগের মূলে ছিল—তারা কীভাবে একজন পরিণত বয়স্ক মানুষ হিসেবে কঠিন জীবন-সংগ্রামে টিকে থাকবে।
গ্যাব্রিয়েল শেলস্কি (২৬) জানান, ১৭ বছর বয়সে তার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল একাকিত্ব। তিনি তখন গে (gay) ছিলেন এবং বন্ধুদের পার্টিতে চুম্বন করতে দেখে নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করতেন।
তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো কোনোদিন তিনি কারও সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন না এবং একাই থাকতে হবে।
অন্যদিকে, অ্যাশটন গর্ডন-এর (২০) মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভয়গুলোও পাল্টায়।
একসময় তিনি মৃত্যুর কথা ভাবলে ভয় পেতেন, কিন্তু এখন তার একমাত্র ভয় হলো—যদি তার মেয়ের কিছু হয়।
অ্যালেক্স ফ্রেজার (২০১৭)-এর মৃত্যুর ভয় ছিল আসলে প্রিয়জনদের হারানোর ভয় এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতের ভয়ে ভীত না হয়ে বর্তমানকে উপভোগ করা উচিত।
টমি-র (২০২০) ভয় ছিল—গরিব হয়ে পড়া এবং জীবনের কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে না পাওয়া। অন্যদিকে, ডিজন বার্নার্ড (Deujean Bernard) তাঁর সন্তানদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি একটি স্যুপ রান্নাঘর চালান, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করা হয়।
স্ট্যাজি স্টাসোপোল্লোস-এর (Stazzy Stasopoullos) মতে, ব্যর্থতা তার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, যা এখনও একইরকম আছে।
তবে সময়ের সাথে সাথে সাফল্যের ধারণা তার কাছে পাল্টে গেছে। এখন তিনি পরিবারের জন্য একটি ভালো জীবন নিশ্চিত করতে চান।
আহমেদ মাসুদ-এর (Ahmed Masoud) ভয় ছিল—গাজায় তার পরিবারের খাদ্য ও জলের অভাব এবং স্বজন হারানোর কষ্ট। তিনি একজন লেখক, যিনি প্যালেস্টাইন ও ব্রিটিশ সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেন।
১৯ বছর বয়সী মডেল জে (Jay)-এর ভয় ছিল—কাজের প্রতি তার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে কী হবে।
তিনি দক্ষিণ লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন এবং দেখেছেন, অনেক মানুষ কঠোর পরিশ্রমের পরেও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।
ইউকেন বেজারা-র (Eucane Bezerra) কাছে মায়ের মৃত্যু ছিল সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। কেনান কিয়ান-এর (Kenan Kián) ভয় ছিল, যদি তিনি সঙ্গীতচর্চা করতে না পারেন।
অভিনেতা জেফ্রিন টাইট (Zephryn Taitte) চেয়েছিলেন অভিনয় চালিয়ে যেতে, কিন্তু তার ভয় ছিল—যদি তিনি অভিনেতা হিসেবে সফল না হন, তাহলে একটি সাধারণ চাকরি করতে হতে পারে।
গ্যাব্রিয়েল স্পিচলি (Gabriel Speechly) আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বর্তমানের উদাসীনতা ভবিষ্যতের প্রজন্মের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে।
ক্যাসি হেনরি (Kaci Henry) জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় স্পোর্টস সুবিধা হারানোর ভয় পান। মিকা ল্যামি (Micah Lammie)-র ভয় ছিল—মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে।
জোশ ক্যাম্পবেল (Josh Campbell) চেয়েছিলেন, তার মেয়ের যেন তার মতো কষ্ট পেতে না হয়। তিনি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে এবং তাদের জীবন পরিবর্তনের জন্য কাজ করেন।
এই আলোকচিত্রগুলো যেন এক একটি আয়না, যেখানে লন্ডনের যুবকদের গভীর ভয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে।
তাদের এই কথাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভয় সবারই আছে, আর সেই ভয়ের সঙ্গে লড়াই করেই মানুষ বাঁচে।
তথ্যসূত্র: The Guardian