আতঙ্কে তরুণদের হৃদরোগ বৃদ্ধি! কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

শিরোনাম: অল্প বয়সেই বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি: সচেতনতা জরুরি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হৃদরোগ, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

আগে যেখানে হৃদরোগকে বয়স্কদের সমস্যা হিসেবে দেখা হতো, সেখানে এখন এই রোগ অল্পবয়সী, বিশেষ করে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ—এগুলো সবই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়া, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ০.৩ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন।

২০২৩ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ০.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, মাত্র চার বছরে এই হার ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, একই সময়ে অন্যান্য বয়সের মানুষের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা কমেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, এবং অতিরিক্ত ওজন—এগুলো হৃদরোগের প্রধান কারণ। এছাড়া, ধূমপান, মদ্যপান এবং মাদক সেবনও এই ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়া, জিনগত কারণেও কারো কারো হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

সম্প্রতি, ৩০-এর কোঠায় থাকা একজন সুস্থ সবল ব্যক্তি নিউইয়র্ক সিটি ট্রায়াথলনে দৌড়ানোর সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এমনকি বাস্কেটবল খেলার সময় ১৮ বছর বয়সী ব্রোনি জেমস নামে এক তরুণ খেলোয়াড়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

এ ধরনের ঘটনাগুলো তরুণ প্রজন্মের হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা জরুরি।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) তাদের ‘লাইফ’স এসেনশিয়াল ৮’ নামে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে, যেখানে হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, ধূমপান পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ডা. রন ব্ল্যাঙ্কস্টেইন, যিনি ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন্স হসপিটালের একজন সিনিয়র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, বলেছেন, “হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

কারণ হৃদরোগ কোনো বয়সের সীমা জানে না।”

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, তরুণ বয়সে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

সেই সঙ্গে, স্বাস্থ্যখাতেও তরুণদের হৃদরোগ বিষয়ক চিকিৎসার ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সুতরাং, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বেছে নিয়ে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *