ঘর ছেড়ে বহু দূরে! কান্নাভেজা চোখে তরুণীর ‘তিক্ত-মিষ্টি’ জীবন

একটি নতুন দিগন্তের খোঁজে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো এক তরুণীর গল্প।

জীবন মানেই তো নতুন পথে চলা, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আর এই পথচলার বাঁকে অনেক সময় আসে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকার কষ্ট।

তেমনই এক গল্প শোনাবো আজ। ইংল্যান্ডের সাউথ ওয়েস্ট লন্ডনের বাসিন্দা নিয়াভ থম্পসন-এর গল্প, যিনি সুদূর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পাড়ি জমিয়েছেন।

নিয়াভের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পেছনে ছিল একটি স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই তার মনে হতো, অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া আর প্রকৃতির অনবদ্য সৌন্দর্য তাকে কাছে টানছে।

তাই, এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ঘর ছাড়েন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই এক বছর যেন ছয় বছরে পরিণত হয়েছে।

সিডনিতে আসার পর প্রথমে সবকিছু বেশ সুন্দরই ছিল। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ – সব মিলিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল।

কিন্তু পরিবারের মায়া কাটিয়ে ওঠা কি এত সহজ? বাবা যখন প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় এসে কিছুদিন কাটিয়ে দেশে ফিরছিলেন, সেই সময়কার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, নিয়াভ বাবাকে বিদায় জানানোর পর গাড়ির সিটে বসে অঝোরে কাঁদছেন।

আসলে, প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকার কষ্টটা অনেক বেশি। বিশেষ করে যখন দেশের বাড়িতে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, অথবা কোনো শোকের ছায়া নেমে আসে, তখন তাদের পাশে থাকতে না পারার যন্ত্রণা বুকে বাজে।

নিয়াভও এর ব্যতিক্রম নন।

তবে, এই দূরত্বের মধ্যেও নিয়াভ নিজের ভালো থাকার চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, জীবন আমাদের নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে, আর এই চ্যালেঞ্জগুলোই আমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

তিনি প্রায়ই একটি কথা বলেন: “যা কিছু তোমাকে চ্যালেঞ্জ জানায় না, তা তোমাকে পরিবর্তনও করে না।

নিয়াভ তার বাবা-মায়ের খুব কাছের। তাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে টেক্সট, কল এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন।

কিন্তু পরিবারের সান্নিধ্যের অভাব তো সহজে পূরণ হওয়ার নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা আরও বেড়েছে, যা তাকে কিছুটা দ্বিধায় ফেলেছে।

ভবিষ্যতে তিনি কোথায় থাকবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

যারা এমন একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করছেন, তাদের জন্য নিয়াভের পরামর্শ হলো, নিজের ভেতরের ডাকে সাড়া দিন। এমনকি যদি এক বছরের জন্য হলেও, নিজের পরিচিত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসুন।

নতুন কিছু করার এই সাহস ব্যক্তিগত বিকাশে অপরিহার্য।

বর্তমানে, নিয়াভ একজন যোগা প্রশিক্ষক। তিনি পাওয়ার ভিনিয়াসা এবং ইয়িন যোগা-র উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

নিজের ভালো থাকার জন্য, নিজের স্বপ্নের পথে অবিচল থাকার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন এই পথ।

নিয়াভ এখনো মাঝে মাঝে দ্বিধায় ভোগেন। বিশেষ করে যখন তিনি ভাবেন, ত্রিশের কোঠায় পা রাখার পর তিনি কি নিজের পরিবার শুরু করবেন, নাকি অস্ট্রেলিয়াতেই স্থায়ী হবেন।

হয়তো, অস্ট্রেলিয়া তার চিরকালের ঠিকানা নাও হতে পারে। তবে, তিনি দিন দিন, মাস মাস করে জীবনকে উপভোগ করতে চান এবং বিশ্বাস করেন, মহাবিশ্বের তার জন্য একটি সুন্দর পথ তৈরি করে রেখেছে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *