বিজ্ঞানীরা বিলুপ্তপ্রায় তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, যা সংরক্ষণ বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা প্রাণীটির জিনোম সফলভাবে ম্যাপিং করেছেন এবং জেনেটিক প্রকৌশলের মাধ্যমে এটিকে পুনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
খবরটি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি ‘কলোসাল বায়োসায়েন্স’ এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
১৯৩৬ সালে তাসমানিয়ান বাঘ বা থাইলাসিনকে শেষবারের মতো তার প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার এই মার্সুপিয়াল প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কলোসাল বায়োসায়েন্সের মতে, সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী আট বছরের মধ্যেই হয়তো বাঘটিকে আবার দেখা যেতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্যাস্ক জানান, “আমরা এখন থাইলাসাইনের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হয়েছি। অর্থাৎ, জিনগত কোডের প্রতিটি অংশ আমরা বিশ্লেষণ করতে পেরেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা ইতিমধ্যেই মূল স্টেম সেল তৈরি করতে পেরেছি, যা থাইলাসিনকে পুনর্গঠন করতে প্রয়োজনীয় জেনেটিক প্রকৌশল প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।”
এর আগে, কলোসাল বায়োসায়েন্স বিলুপ্তপ্রায় ‘ডাইর উলফ’-কে (Dire wolf) পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিল। কোম্পানিটি তিনটি ডাইর উলফের শাবক উন্মোচন করেছে, যাদের নাম রাখা হয়েছে রোমুলাস, রেমাস এবং খালেসি।
ডাইর উলফ প্রজাতিটি জনপ্রিয় ‘গেম অফ থ্রোনস’ (Game of Thrones) সিরিজে বিশেষভাবে পরিচিত।
জিন সম্পাদনার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা বিদ্যমান প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ডিএনএ তৈরি করছেন।
কলোসালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন ল্যাম জানান, “আমরা ১৩,০০০ বছর পুরোনো দাঁত এবং ৭২,০০০ বছর পুরোনো খুলি থেকে ডিএনএ নিয়ে সুস্থ ডাইর উলফ শাবক তৈরি করেছি।”
এই প্রকল্পগুলো কলোসালের ‘ডি-এক্সটিঙ্কশন’ প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রজাতিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা।
তাসমানিয়ার মানুষের কাছে তাসমানিয়ান বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই, এই প্রজাতির পুনরুজ্জীবন তাসমানিয়ার মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গবেষণা একদিকে যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, তেমনই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার এই প্রচেষ্টা, পরিবেশ সংরক্ষণে বিজ্ঞানীদের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
তথ্য সূত্র: পিপল