লন্ডনের বুকে আধুনিক শিল্পের এক উজ্জ্বল কেন্দ্র, টেট মডার্নের ২৫ বছর পূর্তি হতে চলেছে। ২০০০ সালের মে মাসে এক জমকালো আয়োজনের মধ্যে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল।
টেমস নদীর তীরে, এক সময়ের পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সংস্কার করে তৈরি করা হয় এই জাদুঘরটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সহ শিল্প-সংস্কৃতির জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।
টেট মডার্নের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যালেক্স বিয়ার্ডের মতে, জাদুঘরটির প্রথম সকালটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, উদ্বোধনের পরের দিন সকালে বাইরে এসে তিনি দেখেন, বহু মানুষ দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, জাদুঘরে প্রবেশের জন্য।
তাদের চোখেমুখে ছিল এক অসাধারণ আগ্রহ, যা তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল ছিল।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই টেট মডার্ন বিশ্বজুড়ে আধুনিক শিল্প প্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, বছরে প্রায় ২০ লক্ষ দর্শক এখানে আসবেন।
কিন্তু বাস্তবে সেই সংখ্যা প্রত্যাশার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে, এটি বার্ষিক দর্শক আকর্ষণের দিক থেকে ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত বছর প্রায় ৪৬ লক্ষ দর্শক এসেছিলেন এখানে।
আগামী ৯ থেকে ১২ মে পর্যন্ত জাদুঘরটি তার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে থাকছে নানা ধরনের শিল্পকর্ম, লাইভ মিউজিক এবং বিভিন্ন পারফরম্যান্সের প্রদর্শনী।
লুই বুর্জোয়া-এর বিখ্যাত মাকড়সার ভাস্কর্য ‘মামান’-এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করবে। এছাড়াও, অ্যান্ডি ওয়ারহোল, সালভাদর দালি, এবং অন্যান্য খ্যাতিমান শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে।
ডিজাইন মিউজিয়ামের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী টিম মার্লো মনে করেন, টেট মডার্ন লন্ডনের জাদুঘরের ধারণাই বদলে দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি জাদুঘর নয়, বরং আধুনিক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।
মার্লো আরও বলেন, টেট মডার্ন লন্ডনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছে।
তবে, এই সাফল্যের পাশাপাশি টেট কর্তৃপক্ষের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দর্শক সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য একটি টেকসই আর্থিক মডেল তৈরির চেষ্টা চলছে।
শিল্প সমালোচকদের মতে, টেট মডার্নের এই যাত্রা শুধু একটি জাদুঘরের গল্প নয়, বরং আধুনিক শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে, শিল্পকলা কিভাবে একটি শহরের সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: The Guardian