স্বপ্নের যাত্রা: জাপানের সবচেয়ে সুন্দর পর্বত পথে!

জাপানের উত্তর আল্পসের মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা: টেটায়ামা-কুরোবে আলপাইন রুটের হাতছানি।

যারা ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য জাপানের টেটায়ামা-কুরোবে আলপাইন রুট একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।

হোনশুর কেন্দ্রে অবস্থিত এই রুটে ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি জাপানের পার্বত্য অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

এই রুটের প্রধান আকর্ষণগুলো হলো টেটায়ামা পর্বত, কুরোবে বাঁধ এবং তুষারের দেয়াল (স্নো ওয়াল)।

টেটায়ামা-কুরোবে আলপাইন রুটে ভ্রমণ মানে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া, যা সাধারণত অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো।

এই রুটে ভ্রমণের জন্য ট্রেন, ফিউনিকুলার, কেবল কার, ইলেক্ট্রিক বাস এবং পায়ে হাঁটার মতো বিভিন্ন ধরণের পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।

ভ্রমণ শুরু করার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো তোয়ামা।

এখানকার তাজা ও সুস্বাদু সি-ফুড এর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।

বুলেট ট্রেনে করে সহজেই টোকিও থেকে এখানে আসা যায়।

তোয়ামার পাশেই রয়েছে জাপান সাগরের নীল জলরাশি আর উত্তরে রয়েছে জাপানি আল্পস পর্বতমালা।

এখানকার স্থানীয় ট্রেনে চড়ে সংকীর্ণ পথ ধরে যাওয়ার সময় শহরের দৃশ্য এবং গ্রামের শান্ত পরিবেশ মন ছুঁয়ে যায়।

এরপরের গন্তব্য টেটায়ামা।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫৫৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত টেটায়ামা শহরটি পাহাড়ী জীবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য দারুণ একটি জায়গা।

এখানে টেটায়ামা মিউজিয়ামে স্থানীয় পাহাড়গুলোর ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়।

এখানকার টেট পর্বত (৯,৮৯২ ফুট) স্থানীয়দের কাছে পবিত্র এবং দেবতাদের কাছাকাছি একটি স্থান হিসেবে পরিচিত।

টেটায়ামার পর আপনার যাত্রা আপনাকে নিয়ে যাবে মুরুদোতে।

এই রুটের সবচেয়ে উঁচু স্থান হলো মুরুদো, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,০৩৮ ফুট উপরে অবস্থিত।

এখানে পৌঁছানোর জন্য ফিউনিকুলার রেলওয়ে এবং হাইল্যান্ড বাসে চড়ে পাহাড় পথের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

মুরুদোতে ‘স্নো ওয়াল’ বা তুষারের বিশাল দেয়াল অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

এছাড়াও এখানে আপনি জিগোকুদানি উপত্যকার (নরকের উপত্যকা) কাছাকাছি হেঁটে যেতে পারেন, যেখানে সালফার সমৃদ্ধ ধোঁয়া নির্গত হয়।

কুরোবে বাঁধ এই রুটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইলেক্ট্রিক বাসে করে একটি সুড়ঙ্গ পথ পাড়ি দেওয়ার পর আপনি পিলারবিহীন কেবল কারে চড়ে উশিরো টেটায়ামা পর্বতশ্রেণীর দিকে যেতে পারেন।

এরপর আন্ডারগ্রাউন্ড ফিউনিকুলার রেলওয়েতে চড়ে কুরোবে বাঁধের কাছাকাছি যাওয়া যায়।

কুরোবে বাঁধ জাপানের সবচেয়ে উঁচু বাঁধ, যা দেশটির যুদ্ধের পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

নাগানো শহর এই রুটের শেষ গন্তব্য।

ওগিজাওয়া থেকে ইলেক্ট্রিক বাসে করে নাগানোতে পৌঁছানো যায়।

নাগানো ‘জাপানের ছাদ’ নামেও পরিচিত।

যারা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী, তারা এখানে সপ্তম শতাব্দীর জেংকোজি মন্দির পরিদর্শনে আসেন।

এছাড়াও, এখানকার গরম পানির ঝর্ণা বা ওনসেন-এ স্নান করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে বন্য বানরদেরও দেখা মেলে।

নাগানো থেকে শিংকানসেন ট্রেনে করে দ্রুত এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিটে টোকিওতে ফেরা যায়।

টেটায়ামা-কুরোবে আলপাইন রুট ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।

এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আপনি তুষারের দেয়াল দেখতে পারবেন।

গ্রীষ্মকালে (জুন থেকে আগস্ট) পাহাড়ের ঢালে নানান ধরনের ফুল ফোটে এবং এই সময়ে অনেক পর্যটকের সমাগম হয়।

শরৎকালে (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) এখানকার গাছপালা লাল, হলুদ এবং কমলা রঙে সজ্জিত হয়ে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করে।

এই রুটে ভ্রমণের জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।

শীতের মাসগুলোতে ভ্রমণের সময় গরম কাপড়, জলরোধী পোশাক এবং ভালো মানের জুতা সঙ্গে নিন।

গ্রীষ্ম ও শরতে হালকা আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, উচ্চতার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, তাই সানস্ক্রিন এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে রাখা ভালো।

যদি আপনি নিজে এই রুটে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে এটিও সম্ভব।

এখানকার সব পরিবহনের স্টপেজে ইংরেজি ভাষায় নির্দেশনা রয়েছে এবং কর্মীদের কাছ থেকেও আপনি সাহায্য পেতে পারেন।

তোয়ামা থেকে নাগানো পর্যন্ত একমুখী টিকিটের দাম প্রায় ১৬,৬৬০ ইয়েন (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২২,০০০ টাকা)।

সুতরাং, যারা প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য টেটায়ামা-কুরোবে আলপাইন রুট হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *