চাকরি ছাড়তেই হলো! শিক্ষিকার বেতন ফাঁস, এরপর…

শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর নতুন পথে যাত্রা, কিভাবে বদলে গেল জীবন?

আট বছর শিক্ষকতা করার পর, ম্যাগী পারকিন্স নামের ৩২ বছর বয়সী এক নারী তার পুরনো পেশা ত্যাগ করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ম্যাগী ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু কর্মপরিবেশ এবং বেতন-সহ নানান সমস্যা তাকে অবশেষে এই পেশা ছাড়তে বাধ্য করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ‘পিপল’-এর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ম্যাগী জানান, শিক্ষকতার পরিবেশ দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিনি যখন চাকরি ছাড়েন, তখন তার বার্ষিক বেতন ছিল ৪৭,০০০ ডলার।

ম্যাগীর ভাষায়, শিক্ষকরা প্রায়ই স্টারবাকস অথবা কস্টকো-র মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা আলোচনা করতেন। কস্টকো-তে চাকরির সুযোগ আসার আগে তিনি বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেননি।

কস্টকো হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সদস্যপদ নিয়ে পণ্য কিনতে হয়।

পরবর্তীতে তিনি পিএইচডি করার জন্য ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়াতে ভর্তি হন।

গ্রীষ্মকালে যখন নতুন একটি কস্টকো শাখা খোলা হয়, তখন তিনি সেখানে চাকরির জন্য আবেদন করেন।

ম্যাগী বলেন, “ঠিক যেন কাকতালীয়ভাবে সবকিছু মিলে গিয়েছিল। সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে ছিলাম, আর এরপর ইতিহাস তৈরি হয়।”

শুরুর দিকে ম্যাগী কস্টকো-র চাকরিটিকে ‘কিছুদিন চলার মতো’ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি হয়তো পরবর্তীতে অধ্যাপক হওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি যখন অ্যাকাডেমিক জগৎ সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারলেন, তখন তার আগ্রহ কমে যায়।

কস্টকো সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পর, তিনি বুঝতে পারেন যে, এখানে কাজ করা তার জন্য অনেক বেশি আনন্দের।

তিনি এখানকার বিভিন্ন পদে কাজ করার সুযোগ পান, এমনকি কর্পোরেট অফিসেও।

বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটনের ইসাকুয়াহ-তে অবস্থিত সদর দফতরে কর্পোরেট ট্রেইনার ও মার্কেটিং বিভাগের কন্টেন্ট ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন।

তার প্রধান কাজ হলো, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সামগ্রী তৈরি করা।

আগের পেশা এবং বর্তমান কাজের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলেই মনে করেন ম্যাগী।

তিনি বলেন, “আমি কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি, কারণ আমি তাদের জায়গায় ছিলাম। আমিও একসময় কস্টকো-র কর্মী ছিলাম, ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। এখন আমি তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি এখানকার মানুষগুলোকে ভালোবাসি।

গ্রাহকদের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটিও আমার ভালো লাগে।

আমি আমাদের পণ্যের গুণগত মান এবং আমাদের লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাসী।

আমি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করিনি, যারা কস্টকোর মতো কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা এবং সঠিক জিনিস করার বিষয়ে এত বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

আগের শিক্ষকতার জীবনের সঙ্গে বর্তমানের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো কাজের সময়।

শিক্ষকতার সময় তাকে অনেক বেশি সময় দিতে হতো, যা এখন আর করতে হয় না।

ম্যাগী জানান, আগে তিনি প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করতেন।

ছুটির দিন এবং এমনকি ছুটিতেও তাকে কাজ করতে হতো।

নিজের ক্লাসরুমের জন্য তাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক খরচ করতে হয়েছে এবং মানসিক চাপ তো ছিলই।

ম্যাগী মনে করেন, তিনি হয়তো আর শিক্ষকতা পেশায় ফিরবেন না।

তবে পিএইচডি ডিগ্রিধারী হিসেবে ভবিষ্যতে হয়তো তিনি একটি সেমিস্টারের জন্য ক্লাস নিতে পারেন, যা তার ভালো লাগবে।

নিজের এই পরিবর্তন এবং নতুন পথের যাত্রা তিনি টিকটকে তুলে ধরেছেন।

শিক্ষকতা ছেড়ে কস্টকো-র মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

কারণ এটি শিক্ষকতা এবং খুচরা ব্যবসার ধারণা পরিবর্তন করে।

ম্যাগী এমন অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা শিক্ষকতা বা স্বাস্থ্যসেবার মতো পেশায় জড়িত।

তাদের অনেকেই অতিরিক্ত কাজ এবং প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার কারণে হতাশ।

যারা এই ধরনের পেশায় কাজ করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে ম্যাগী বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আপনি দায়ী নন।

নিজের ভালো থাকার জন্য যদি আপনি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি খারাপ শিক্ষক নন।

কোনো কাজ আপনাকে ভালোবাসতে পারে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “জীবন পরিবর্তনের জন্য কখনো বয়স কোনো বাধা নয়।”

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *