স্বর্গ ভেবেছিলেন! ৬ বছরের শিশুর গুলিতে শিক্ষিকার জবানবন্দি, যা জানা গেল

যুক্তরাষ্ট্রে এক ভয়াবহ ঘটনায়, ছয় বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এক শিক্ষিকা।

এই ঘটনার জেরে স্কুলের প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করেছেন ওই শিক্ষিকা।

২০২৩ সালের ৬ই জানুয়ারি, আমেরিকার ভার্জিনিয়ার নিউপোর্ট নিউজ এলাকার রিচনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।

ক্লাসরুমে বসে থাকা অবস্থায়, ওই শিক্ষার্থীর ছোড়া গুলিতে গুরুতর জখম হন শিক্ষিকা অ্যাবি জর্নার।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো তিনি মারা যাচ্ছেন।

আহত শিক্ষিকা, প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ইবনি পার্কের বিরুদ্ধে ৪০ মিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পার্ক স্কুলের কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শিক্ষার্থীর কাছে বন্দুক থাকার বিষয়ে সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

বর্তমানে এই মামলার শুনানি চলছে।

একই সঙ্গে, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ইবনি পার্কের বিরুদ্ধে গুরুতর শিশু অবহেলার অভিযোগে ফৌজদারি মামলাও বিচারাধীন।

আদালতে দেওয়া জর্নারের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে ঘটনার ভয়াবহতা।

তিনি জানিয়েছেন, গুলির আঘাতের কারণে তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে।

এমনকি, সাধারণ কাজ করতেও তিনি এখন অন্যের সাহায্য নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাতে গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি চিপসের প্যাকেট পর্যন্ত খুলতে পারেন না।

অস্ত্রোপচারের পরও তার হাত স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

শুধু শারীরিক আঘাতই নয়, মানসিক দিক থেকেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তার।

ঘটনার পর থেকে তিনি স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে গেছেন।

পরিচিতজনদের সঙ্গেও তার আগের মতো সম্পর্ক নেই।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জর্নার পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) ভুগছেন।

তিনি এখন আর আগের মতো নিরাপদ বোধ করেন না।

বাইরে বের হতেও ভয় পান।

সিনেমা দেখতে যাওয়া বা জনসমাগমে যাওয়া তার কাছে এখন দুঃস্বপ্নের মতো।

তবে, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী জর্নারের মানসিক আঘাতের বিষয়টিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

তারা আদালতে এমন কিছু প্রমাণ পেশ করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে ঘটনার পরও তিনি কনসার্টে গিয়েছেন।

আইনজীবীরা এও প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি কসমেটোলজি স্কুলে গিয়েছেন এবং শরীরচর্চা করেছেন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেওয়ানি মামলার রায় ফৌজদারি মামলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

কারণ, দেওয়ানি মামলার মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়, যা ফৌজদারি মামলায় সহায়ক হতে পারে।

এই মামলার রায় শিশুদের নিরাপত্তা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের বিষয়টি আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।

ভবিষ্যতে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *