ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ! স্মার্টফোন, পোশাক: কোটি বছর পর কেমন দেখাবে আমাদের চিহ্ন?

ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন দেখতে হবে, যদি কয়েক কোটি বছর পর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আমাদের ফেলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পায়? তারা কি আবিষ্কার করবে?

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন বইয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন দুই বিজ্ঞানী। তাদের মতে, মানুষের তৈরি বিভিন্ন বস্তু, যেমন প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, পোশাক, এমনকি কংক্রিটের তৈরি বিভিন্ন কাঠামো—এগুলোই হবে ভবিষ্যতের “টেকনোফসিল” বা প্রযুক্তিনির্ভর জীবাশ্ম।

যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ সারা গ্যাবোট এবং জন জালাসিউইজ এই বইটির লেখক। তাদের মতে, ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা মানুষের কঙ্কাল বা হাড়ের বদলে প্লাস্টিকের বোতল, পুরনো মোবাইল ফোন, টি-শার্ট, কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান খুঁজে পাবেন।

এই বস্তুগুলোই তাদের কাছে প্রমাণ দেবে, একসময় পৃথিবীতে মানুষের বসবাস ছিল।

গবেষকদের মতে, বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত জিনিসের তুলনায় জীবন্ত প্রাণীর পরিমাণ অনেক কম। প্রতি বছর বিশ্বে ১০০ বিলিয়ন পোশাক তৈরি হয়, যার প্রায় ৬০ শতাংশই তৈরি হয় প্লাস্টিক থেকে।

একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বোতল, বাজারের ব্যাগ, বলপয়েন্ট পেন—এগুলো দ্রুত পরিবেশে মিশে যায় না। বরং বছরের পর বছর ধরে এগুলো জমতে থাকে এবং একসময় জীবাশ্মে পরিণত হয়।

গ্যাবোত মনে করেন, পোশাকও একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনোফসিল হবে। কারণ, বর্তমানে তৈরি পোশাকগুলো সহজে পচনশীল নয়।

এগুলো সহজে ধ্বংস হয় না এবং জীবাশ্মে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো বস্তুকে জীবাশ্মে পরিণত হতে বিশেষ কিছু পরিবেশগত পরিস্থিতির প্রয়োজন। দ্রুত মাটির নিচে চাপা পড়া এবং অক্সিজেনের অভাব—এই দুটি বিষয় জীবাশ্ম তৈরির জন্য সহায়ক।

তারা আরও উল্লেখ করেন, মানুষের তৈরি জিনিসপত্র সহজে ক্ষয় হয় না। এগুলো আবহাওয়া, সূর্যের আলো, এবং অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম।

তাই এগুলো সহজে জীবাশ্মে পরিণত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব শহর সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি, যেমন নিউ অরলিন্স বা আমস্টারডাম, সেগুলোর বিভিন্ন কাঠামো, যেমন সাবওয়ে ব্যবস্থা—এগুলো অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকতে পারে এবং একসময় টেকনোফসিল হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

তবে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা এই টেকনোফসিলগুলো থেকে মানুষের সম্পর্কে কতটা জানতে পারবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। একটি স্মার্টফোনকে উদাহরণ হিসেবে ধরলে, এর বাইরের প্লাস্টিক সহজে টিকে থাকবে।

কিন্তু ভেতরের কাঁচ, যা সময়ের সঙ্গে ঘোলাটে হয়ে যাবে, অথবা বিভিন্ন ধাতব উপাদানগুলো—এগুলো থেকে এর ব্যবহার সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা পাওয়া যাবে না।

জালাসিউইজ মনে করেন, আমাদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা থেকে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করতে পারে, যা সত্যিই অবাক করার মতো হবে।

যেমন—প্লাস্টিক বা রেজিনের মধ্যে আটকে থাকা পালক বা কোনো প্রাণীর কঙ্কাল, যা আমাদের অতীতের অনেক অজানা তথ্য জানাতে পারে।

বর্তমানে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, একবার পুনর্ব্যবহারের পর অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে থেকে যায়।

এই বর্জ্যগুলো রাস্তা তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হলেও, শেষ পর্যন্ত এগুলোও টেকনোফসিল হয়ে উঠবে।

গবেষকরা বলছেন, আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রার কারণে পরিবেশে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে।

প্লাস্টিক দূষণ এবং দ্রুত ফ্যাশনের সংস্কৃতি—এগুলো আমাদের পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। তাই টেকসই উন্নয়ন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *