হারানো প্রেম: ২৬ বছর পর, এক গ্রীষ্মের ভালোবাসার পুনর্মিলন!

দীর্ঘ অপেক্ষার পর: কৈশোরের প্রেম, ছাব্বিশ বছর পর পুনর্মিলন

নিউ ইয়র্কের এক কিশোরী, কেরী কানিংহাম। ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মে, পরিবারের সাথে ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছিল সে। শুরুতে একেবারেই মন ছিল না তার। বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর বদলে, তাকে একঘেয়ে এক সফরে যেতে হয়েছিল।

কিন্তু নিয়তির খেলা তো অন্যরকম ছিল। এই ভ্রমণই তার জীবনে এনেছিল এক নতুন মোড়।

ভ্রমণের শুরুটা তেমন সুখকর ছিল না কেরীর জন্য। ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে, তার আলাপ হয় ডিরেক স্টিভেন্স নামের এক কিশোরের সাথে। ডিরেকও তার পরিবারের সাথে ইতালি ভ্রমণে যাচ্ছিল।

সুদর্শন ডিরেককে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় কেরীর। তাদের মধ্যে দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ঘোরার সময়, তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।

দিনের বেলা পরিবারের সাথে ঘোরাঘুরি চললেও, রাতের বেলা তারা দু’জন সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে সময় কাটাতো। ইতালির এক হোটেলে, তারা একসাথে নেচেছিল। ক্যান্ডেল লাইটের নিচে বসে, তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা বলত। তাদের এই কিশোর প্রেমের স্মৃতি আজও অমলিন।

দু’সপ্তাহের ভ্রমণ শেষে, কেরী ও ডিরেক তাদের পরিবারের সাথে আলাদা হয়ে যায়। বিদায়টা তাদের জন্য সহজ ছিল না। তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। চিঠি আদান-প্রদান চলতে থাকে, আর মাঝে মাঝে লম্বা ফোনে কথা হতো তাদের।

পরের বছর, ডিরেক আবার আসে নিউ ইয়র্কে, কেরীর সাথে দেখা করতে। সেই সময়টা ছিল তাদের ভালোবাসার চূড়ান্ত মুহূর্ত। সমুদ্র সৈকতে ঘোরাঘুরি, একসাথে কাজ করা—যেন তারা এক নতুন জগৎ তৈরি করেছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। পড়াশোনা, কর্মজীবন—এসবের ভিড়ে তাদের যোগাযোগ কমে আসে।

কেরীর বাবা, এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শোকের সেই সময়ে, ডিরেক আবার তার সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ২০০১ সালে, প্যারিসে তাদের আবার দেখা হয়। কেরীর বাবার মৃত্যুর পর, ডিরেক চেয়েছিল তাকে সাহায্য করতে। প্যারিসের সেই স্মৃতি আজও তাদের মনে গেঁথে আছে।

সময় গড়াতে থাকে। কেরী বিয়ে করে, কিন্তু তার সেই সংসার বেশি দিন টেকেনি। এরপর তিনি কঠিন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যান। এরই মধ্যে, ডিরেকও তার দাম্পত্য জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হন।

২০১৯ সালে, আয়ারল্যান্ডে কেরীর সাথে দেখা হয় ডিরেক এর। তাদের পুরনো প্রেম যেন আবারও জেগে ওঠে। দীর্ঘদিনের ব্যবধান তাদের ভালোবাসার গভীরতা এতটুকুও কমাতে পারেনি। বরং, তারা বুঝতে পারে, তাদের সম্পর্ক আসলে সময়ের গন্ডি পেরিয়ে গেছে।

আজ, কেরী এবং ডিরেক একসাথে তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। কেরী এখনও আমেরিকায় কাজ করে, আর ডিরেক থাকে ইংল্যান্ডে। দূরত্বের কারণে তাদের মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাৎ কম হয়, তবে ভালোবাসার বাঁধন তাদের অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছে। তাদের এই গল্প, ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তাদের প্রেম, জীবনের পথচলার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *